সাকার মাছ রোধে সংশোধন হচ্ছে মৎস্য আইন
ইবাংলা ডেস্ক
আশির দশকে এটি অ্যাকুয়ারিয়ামের শেওলা ও ময়লা পরিষ্কার করতে সাকার মাছ বিদেশ থেকে আনা হয়। তবে দেশের সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে কালছে কাঁটাযুক্ত এ মাছ। যা দেশীয় প্রজাতির মাছের জন্য হুমকি। যে কোনো পরিবেশে মানাতে পারে বলে বংশবৃদ্ধিও খুব বেশি। যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এখনই এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে আমাদের দেশিয় প্রজাতির মাছের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেবে এই মাছ।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ বলেন, মাছটি আমাদের দেশ ও পরিবেশের জন্য ভালো নয়। আমরা আমাদের সকল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ নিয়েছি যেখানে এই মাছ পাওয়া যাবে সেখানেই এটি ধ্বংস করতে হবে। কোনো পুকুরে এ মাছ দেখা গেলে পুকুরের পানি নিষ্কাশন করে এই মাছ নিধন করতে হবে। পাশাপাশি মৎস্যচাষীদের এ মাছের কুফল সম্পর্কে সচেতন করার কাজ চলছে।
তিনি আরো বলেন, এই মাছ দেশ থেকে বিলুপ্ত বা মেরে ফেলার জন্য আমরা মৎস্য আইন ২০১১ সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে বিদেশি মাছের ব্রিডিং, শাস্তি, ক্ষতিকর মাছ নিধনসহ বেশ কিছু সংযুক্তি আনা হবে।
১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হওয়া এই মাছ প্রচুর পরিমাণে খাবার খায়। বিশেষত জলাশয়ের সব শ্যাওলা খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এছাড়া চিংড়ি ও ছোট শামুক জাতীয় শক্ত খোলের প্রাণী খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। এদের লেজে ও পাখার আঘাতে অন্য মাছের দেহে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
এরা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে অন্যান্য মাছের আবাসস্থল দখল করে ফেলে। মাছটি পানি ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে। এদের মধ্যে লাফানোর প্রবণতা থাকায় তারা এক জলাশয় থেকে আরেক জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে আনায়াশেই। তবে আমাদের দেশে এটা কতোটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে।
মৎস্য অধিদফতরের উপপরিচালক (মৎস্য চাষ) ড. মো. খালেদ কনক জানান, দেশে প্রায় সব জেলাতেই এই মাছ ছড়িয়ে পরার শঙ্কা রয়েছে। তবে এখনো আমারা নিশ্চিত নই, সব জেলায় ছড়িয়ে পরেছে কি না। তবে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি দ্রুত ছড়িয়ে পরছে। এখনই বিস্তার রোধ করতে না পারলে আমাদের দেশীয় প্রজাতির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাকার ফিশ বিদেশ থেকে আনা হলেও এখন দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে পাওয়া যাচ্ছে। সাকার মাছ দেশীয় প্রজাতির জন্য হুমকি, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
যে জলাশয় কিংবা নদীতে সাকার মাছ থাকবে, সেগুলো সেখানকার দেশীয় প্রজাতির মাছের খাবার ও আবাস স্থল নষ্ট করে দেবে, নষ্ট করে দেবে জলজ পরিবেশ। ফলে দেশীয় প্রজাতি মাছগুলো খাবার কম পাবে, এক পর্যায়ে হারিয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত এ মাছ নিয়ে আমাদের কোনো গবেষণা হয়নি। তবে গবেষণা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।
ইবাংলা / এইচ / ১ ডিসেম্বর, ২০২১