১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিজয়ের পর থেকেই বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা শুরু করে পাকিস্তানিরা। কিন্তু গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা বুঝতে পারেন। এরপর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তত করতে থাকেন জনগণকে।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই পাকিস্তানি প্রশাসনকে কোণঠাসা করে ফেলে জনতা। সাত কোটি বাঙালিকে সঙ্গে নিয়ে, বাংলার মাটিতে বিকল্প সরকার পরিচালনা করতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দশ লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে ঘোষণা করেন স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত রণ-পরিকল্পনা। মূলত বর্বর পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিরোধের দামামা বেড়ে ওঠে সেদিনই।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশের প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জ-মহল্লার সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সংগঠিত হতে থাকেন। উত্তাল মার্চজুড়ে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলেন স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতি। মোক্ষম সময়ে, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে, বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে তাড়ানোর আগ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। এরপরই যার যা আছে, তাই নিয়ে- দেশজুড়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ে আপামর বাঙালি, প্রতিটি ঘরকে দুর্গে পরিণত করেন তারা। শুরু হয় মহান স্বাধীনতার জন্য এক মরণপণ যুদ্ধ।
তবে মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করার জন্য, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানিরা। পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে তারা। কিন্তু ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে রণাঙ্গণকে মুখরিত করে তোলে বাংলার দামাল সন্তানরা। আকাশে-বাতাসে-নদীতে-অরণ্যে- থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ট্রিগারের স্পর্শে- প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে সদা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর মুখাবয়ব ও উদ্ধত তর্জণী, তার নামের ওপর জীবন বাজি রেখে লড়তে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর, অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানিদের নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য বাঙালির চূড়ান্ত যুদ্ধযাত্রা
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরু থেকেই অসহযোগের ডাক দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে তাকে স্বাধীন বাংলার সর্বাধিনায়ক আখ্যায়িত করে ঘোষণা করা হয় স্বাধীনতার ইশতেহার। ২৩ মার্চ ‘পাকিস্তান দিবস’ বর্জন করে সারাদেশে নামিয়ে ফেলা হয় পাকিস্তানের পতাকা। ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধু উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলার পতাকা। দেশজুড়ে ছেয়ে যায় লাল-সবুজের নিশান।
এরপর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের ঘুমন্ত মানুষের ওপর শুরু করে নারকীয় গণহত্যা। সঙ্গে সঙ্গে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরের দুই দিনের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয় তা। সারা বিশ্ব জেনে যায় বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা।
১৯৭০ এর নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে, বর্বর পাকিস্তানিরা দেশজুড়ে গণহত্যা ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণে মেতে ওঠে। নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তের দিকে ছুটতে থাকে সাধারণ মানুষরা। মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দেয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। পাকিস্তানিদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাদের হিংস্রতার মাত্রা আরো বাড়িয়ে তোলে জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা। জান্তা ও রাজাকারদের অত্যাচারে দিশেহারা হওয়া এক কোটির বেশি বাঙালিকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেয় ভারত।
এরমধ্যেই, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতারা একত্রিত হন কলকাতায়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল- বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে সেখানেই প্রবাসী সরকার গঠন করেন তারা। এরপর ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় (মুজিবনগর) শপথ নেয় প্রবাসী সরকার।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এই সরকারের পক্ষ থেকে- ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাকে অনুমোদন করে এবং তাকে সর্বাধিনায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করা হয়।মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানিদের হয়ে মাঠে নামে রাজাকাররা।
যুদ্ধের শুরু থেকেই জামায়াতে ইসলামি ও মুসলিম লীগের ধর্মব্যবসায়ীরা পাকিস্তানের পক্ষে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়। তারা পথঘাট চিনিয়ে দিয়ে, সারাদেশে নিয়ে যায় দখলদার পাকিস্তানি সেনাদের। গণহত্যা, বাঙালি নারীদের ধর্ষণ ও লুটপাটে পাকিস্তানি বাহিনীর মূল সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে তারা। তাদের নিপীড়নে থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে যাওয়া মানুষের সম্পদ লুট করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয় রাজাকাররা।
মূলত, পাকিস্তানি দখলদার সেনাদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গঠন করা হয় রাজাকার বাহিনী। এজন্য ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার জামায়াত নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয় পাকিস্তানি সেনারা। এসময় একদিন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জান্তাপ্রধান জেনারেল একে নিয়াজী তার জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিককে ডেকে বলে, ‘আজ থেকে তুমি রাজাকারদের আল-বদর ও আল-শামস বলে অভিহিত করবে। তাহলে বোঝা যাবে না যে, এরা কোনো নির্দিষ্ট পার্টির লোক।’
রাজাকারদের বিষয়ে পাকিস্তানি পরাজিত জেনারেলরাও তাদের আত্মজীবনীতে লিখেছে। জেনারেল নিয়াজী লেখে, ‘যুদ্ধক্ষেত্র ছিল অপরিচিত। শত্রু কারা, মিত্র কারা, তা নির্ণয় করা সম্ভব ছিল না। তবে রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর সাহায্যেই প্রতিটি এলাকায় পৌঁছে যায় পাকিস্তানি সৈন্যরা।’
মুক্তিযুদ্ধকালে বাঙালি জাতির ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে জামায়াতের ভূমিকার সর্বজনবিদিত। ১৯৭১ সালে এই ভূখণ্ডে পাকিস্তানিদের নিয়োজিত গভর্নর ও কসাইখ্যাত জেনারেল টিক্কা খানের উপদেষ্টা ছিল জেনারেল রাও ফরমান আলী। আত্মজীবনীতে সে লিখেছে, ‘আমি মুসলীম লীগ, পিডিপি, জামায়াতে ইসলামির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।
এরপর টিক্কার সঙ্গে দেখা করে নুরুল আমীন, খাজা খয়ের, ফরিদ আহমদ, শফিকুল ইসলাম, গোলাম আযমরা শান্তি কমিটি গঠন করে। ৭ এপ্রিল যুদ্ধ চলাকালে তারা পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকায় একটি মিছিলও বের করেছিল। এরপর রাজাকার নামে আরেকটি বাহিনী গঠন করা হয়। এমনকি যুদ্ধকালে নিয়াজীর তৈরি সশস্ত্র আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীও দারুণ সহযোগিতা করেছে পাকিস্তানি সেনাদের।’ এসব বাহিনীর প্রধান ছিল গোলাম আযম, শাহ আজিজ, নিজামী, মুজাহিদসহ শীর্ষ জামায়াত ও শিবিরের নেতারা। পরবর্তীতে, এদের মধ্যে নিজামী ও মুজাহিদের মতো কুখ্যাত বাংলাদেশবিরোধীকে মন্ত্রী বানিয়েছিল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।
১০ এপ্রিলের একটি ঘটনা প্রসঙ্গে জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা আত্মজীবনীতে লিখেছে: ‘জেনারেল নিয়াজী ঘরে ঢুকেই গর্জে উঠলো। বলতে থাকলো: আমি এই বেজন্মা জাতির জাত বদলে দেবো। নিয়াজী সেনাবাহিনীকে বাঙালি নারীদের ওপর লেলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলো। এরপর বাঙালি জাতিকে নিয়ে অনেক অশ্লীল কথাবার্তা বলা শুরু করলো। এর প্রতিবাদ করায়, সেখানে উপস্থিত বাঙালি মেজর মুশতাক বাথরুমে ঢুকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।’
বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানিকরণের জন্য সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মাধ্যমে কমপক্ষে পাঁচ লাখ নারীর জীবন নষ্ট করেছে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। তাদের ধর্ষণের কারণে জন্ম নেওয়া লক্ষাধিক শিশুকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিদেশে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
মানবিক বিপর্যয় রোধে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় ভারতের জনগণ
পাকিস্তানি ও রাজাকারদের নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেছিল এক কোটির বেশি বাঙালি। মানবিক কারণে, তখন এই শরণার্থীদের জন্য খাদ্য, পোশাক, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ নানা সেবা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল ভারতের সর্বশ্রেণির জনগণ। এমনকি শরণার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে ডাকটিকিটের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত সরকার।
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত, নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জন। এর বাইরেও প্রচুর বাঙালি সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। নির্যাতনের শিকার অসহায় বাঙালিদের পাশে দাঁড়াতে মোট ৮২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিল ভারত সরকার। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে, সীমান্তের চারপাশে স্থাপন করেছিল হাসপাতাল।
আগস্ট মাসে, মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি এসব শরণার্থী কেন্দ্র ও রণাঙ্গণ পরিদর্শনে আসেন। পাকিস্তানি জান্তাদের দ্বারা সৃষ্ট এই ঘটনাকে তিনি সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ এক ‘হিউম্যান ট্র্যাজেডি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সীমান্তে প্রশিক্ষণ: অদম্য মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে গড়ে ওঠে রক্তের মিত্রতা
শুরুতে পাকিস্তানিদের ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিরোধ গড়লেও, যুদ্ধে পিছু হঠতে বাধ্য হয় অদম্য সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু তাদের আত্মনিবেদন দেখে সারা আশ্চর্য হয়ে যায় সারা বিশ্ব। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য এগিয়ে আসে ভারত। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য মে মাসে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোকে কমপক্ষে ৩০টি ক্যাম্প খুলেছিল ভারত। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বরে এই ক্যাম্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৪টি। চার থেকে আট সপ্তাহের একেকটি প্রশিক্ষণ ব্যাচে প্রতি ক্যাম্পে ট্রেনিং দেওয়া হতো ৫০০ থেকে ২০০০ মুক্তিযোদ্ধাকে।
মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম দিকে স্বল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে ‘হিট অ্যান্ড রান’ স্টাইলে আক্রমণ করতো পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তারা পাকিস্তানি বাহিনীর সামরিক কনভয়ের ওপর আক্রমণ চালাতে শুরু করে। এমনকি ডুবিয়ে দিতে থাকে পাকিস্তানিদের জলযানগুলোকেও। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রশিক্ষণের পর প্রথমদিকে হালকা অস্ত্রও তুলে দেওয়া হতো।
বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বাংলাদেশি মিশনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেও কিছু অস্ত্র কেনে। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের মৈত্রী চুক্তি সম্পাদনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভারতীয় অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি পায়।
মুজিবনগর সরাকারের অনুরোধ সাপেক্ষে, ২৩ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত বাঙালি নৌসদস্য ও সাঁতারে দক্ষ ৩৫৭ জন বাঙলি তরুণকে বিশেষ নৌ-কমান্ডো ট্রেনিং প্রদান করেন ভারতের প্রশিক্ষকরা। পলাশীর ভাগীরথী নদীতে এরপর আরো দুই ধাপে দেড় শতাধিক নৌ-কমান্ডোকে সুইসাইডাল স্কোয়াড হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২ আগস্ট থেকে চূড়ান্ত আঘাত হানতে শুরু করে নৌসেনারা।
এমনকি আমাদের প্রবাসী সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পর, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি বিমান বাহিনী গঠনেও সাহায্য করে ভারত সরকার। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যুদ্ধবিমান, এয়ার ক্রাফট ও হেলিকপ্টার প্রদান করে। ২৮ সেপ্টেম্বর এই বাহিনী গঠনের পর, বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলেই বৈমানিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি ৪ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর নেতৃত্বে বিমান যুদ্ধের প্রথম দিকে বাংলাদেশি বৈমানিকরাই আক্রমণের নেতৃত্ব দেয় এবং কৃতিত্ব প্রদর্শন করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে এসে, শেষ দুই সপ্তাহে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেড় হাজারের অধিক প্রশিক্ষিত ভারতীয় সেনা প্রাণ হারান। আহত হন চার হাজার সেনাসদস্য। একারণে ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এক রেডিও ভাষণে বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধারা এখন ভারতীয় সেনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে এবং তাদের রক্ত আমাদের রক্তের ধারার সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের মাটিতে বইছে।’
রাজাকারদের বাংলাদেশবিরোধী আন্তর্জাতিক অপতৎপরতা
রণাঙ্গণে যেমন রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী সরাসরি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেছে, গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহায়তা করেছে, বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করেছে। তেমনি কূটনৈতিকভাবেও বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ভুল বুঝিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তাদের সমর্থন দান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে এই বাংলাদেশবিরোধীরা।
এমনকি যখন পাকিস্তানিদের পরাজয় নিশ্চিত হয়, তখন ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যেনো সহজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য এই সংঘবদ্ধ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। বাংলায় এই গণহত্যার নীলনকশার প্রমাণ পাওয়া যায় জেনারেল রাও ফরমান আলীর ডায়রি থেকে। আর পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গী হিসেবে এই হত্যাযজ্ঞ বাস্তবায়ন করে জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত বর্বর রাজাকার বাহিনী।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে, যখন মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি জান্তারা। ঠিক তখনই পাকিস্তানিদের সমর্থনে এবং বাঙালির জাতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে কথা বলতে যায় জামায়াতের মুখপাত্র ও মুসলিম লীগ নেতা নেতা শাহ আজিজুর রহমান।
পাকিস্তান কূটনৈতিক দলের বাঙালি নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে, বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা অস্বীকার করে এই রাজাকার শাহ আজিজ। এমনকি অন্যান্য মুসলিম দেশও যেনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়, এজন্য আহ্বান জানায় সে। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর এই ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসায়।
পাকিস্তানিদের বর্বরতার তথ্য জেনে আঁতকে ওঠে বিশ্ব
বাংলাদেশে পাকিস্তানিরা যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিলো, সেসম্পর্কে প্রথমদিকে বাকি বিশ্ব তেমন কিছুই জানতো না। কারণ পাকিস্তান তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে বিশ্বকে ভুল তথ্য উপস্থাপন করতো। এদিকে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার থাকলেও, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তাদের তখনো কোনো সম্পৃক্ততা গড়ে না ওঠায়- তারাও সঠিক তথ্যগুলো তাদের জানাতে পারছিলেন না। একারণে বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
১৯৭১ সালের ২৪ অক্টোবর ১৯ দিনের জন্য বিশ্ব সফরে বের হন তিনি। ব্রিটেন, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকাসহ অনেক দেশে গিয়ে তাদের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। ৪ ও ৫ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে বৈঠক হয় তার। কিন্তু নিক্সন বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ বলে হালকাভাবে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বৈঠকেই এর তীব্র প্রতিবাদ জানান শ্রীমতি গান্ধী।
মূলত, বিশ্ব সফরের কারণেই বিশ্ববাসী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানি হানাদারদের পাষবিকতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানতে পারে। ফলে বিশ্বজুড়ে জনমত গড়ে উঠতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগের কাজ সহজ হয়ে যায় আমাদের প্রবাসী সরকারের।
এছাড়াও এর আগে এবং পরে জাতিসংঘ, বিশ্ব শান্তি সংঘ এবং রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) নেতাদের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করেন ইন্দিরা গান্ধী। ভারতের কারণেই পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয় তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন। ফলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে ভীত হয়।
বাংলার মাটিতে পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন গণহত্যা ও ধর্ষণ চালাচ্ছিল, তখন পাকিস্তানের জেলের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকেও হত্যার ষড়যন্ত্র চলছিল। বিভিন্ন সাজানো মামলায় তাকে ফাঁসিতে ঝোলানাের পরিকল্পনা করছিল পাকিস্তান। তার জেলের সামনে কবর খুঁড়ে রাখতো তারা। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে, ২১ অক্টোবর এক যুক্ত বিবৃতিতে পাকিস্তানকে সাবধান করে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধী ও যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ টিটো। কিন্তু পাকিস্তানি জান্তারা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। তবে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তা বাস্তবায়নের সাহস তারা পায়নি।
অদম্য বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় এবং স্বাধীনতা অর্জন
২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই দেশজুড়ে শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ। এরমধ্যে প্রবাসী সরকার গঠনের পর যুদ্ধকে আনুষ্ঠানিক কাঠামো দেওয়া হয়। জুলাই মাসে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় রণাঙ্গণকে। বাঙালি জনতা, পেশাজীবী, পুলিশ, ইপিআর, সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গড়ে ওঠে মুক্তিবাহিনী।
পাকিস্তানিদের ওপর অমিত বিক্রমে হামলা চালায় মুক্তিসেনারা। দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি জান্তা ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকাররা। এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে পাকিস্তানিরা। ফলে তাদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য ২১ নভেম্বর গড়ে ওঠে বাংলাদেশ-ভারত মিত্র বাহিনী।
ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রায় এক লাখ প্রশিক্ষিত সেনাকে পরাজয়ের গ্লানি থেকে বাঁচানোর জন্য, ভারতে হামলা চালায় পাকিস্তানিরা। ৩ ডিসেম্বর ভারতে হামলার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে রূপান্তরিত করার কূটচাল চালে জান্তারা। কিন্তু পরেরদিনই মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর সরাসরি পাল্টা আঘাত হানে ভারত। এমনকি ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত সরকার।
একারণে মুক্তিযুদ্ধকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার সব ষড়যন্ত্র একেবারেই শেষ হয়ে যায়। এবং বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর কাছে পরাজিত হয় পাকিস্তানিরা।
ফলে ১৬ ডিসেম্বর, বিকালে, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের খোলা মাঠে, প্রকাশ্য নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। দুই হাজার বছরের ইতিহাসে, প্রথমবারের মতো এই বঙ্গভূমি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।
এই প্রসঙ্গে মিত্র বাহিনীর ভারতীয় জেনারেলরা উচ্চকিত প্রশংসা করেছেন বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের। নিজেদের আত্মজীবনীতে তারা লিখেছেন, মুক্তিবাহিনীর গেরিলা অপারেশনগুলো পাকিস্তানিদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহসের কারণে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তানিরা, নড়ে গিয়েছিল তাদের ভিত।
যেকারণে যুদ্ধের শেষদিকে যখন ভারতীয় সেনারা যখন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মুখ সমরে নামে, তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পাকিস্তানিরা। ফলে বাংলাদেশের বিজয় তরান্বিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং বাংলাদেশ পুর্নগঠন
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধের পর, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। সেদিন পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণের পরপরই, বিকাল সাড়ে ৫টায় ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণকে তাদের এই বিজয়লগ্নে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই নতুন দেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তার জনগণের মধ্যে যথাযোগ্য স্থান গ্রহণ করে বাংলাদেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবেন।’
প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের জনগণ ও সরকার তাদের কথা রেখেছিল। পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। তার আহ্বানে, মাত্র তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনারা। পৃথিবীর ইতিহাসে মিত্রবাহিনীর সেনা কর্তৃক এত দ্রুত বিজয়ী ভূখণ্ড ত্যাগ করার দৃষ্টান্ত দ্বিতীয়টি নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ঘটনা বিরল।
এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নতুন গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি, বাংলা ও বাংলাদেশের প্রশ্ন সেই যে তরুণ বয়সে রাজপথে নেমেছিলেন তিনি, তারই সফল পরিণতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তৈরিতে তরুণ মুজিব যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজপতে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি ১৯৫৭ সালে ‘পূর্ব বাংলা’ নাম পরিবর্তন করে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ করার ব্যাপারেও পাকিস্তান গণপরিষদে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।
অবশেষে, ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ভূখণ্ডকে ‘বাংলাদেশ’ বলে অবিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব পাকিস্তান এর পরিবর্তে শুধু বাংলাদেশ।’
আর ত্রিশ লাখ শহীদ ও চার লক্ষাধিক নারীর ত্যাগের বিনিময়ে সেই স্বাধীনতা অর্জনের পর, মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভারতে আশ্রিত থাকা এক কোটি শরণার্থীকে ফিরিয়ে আনেন তিনি। নির্মাণ ও সংস্কার করে দেন প্রায় দুই কোটি স্থানচ্যুত মানুষের বাড়িঘর। পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে, বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রেরই স্বীকৃতি আদায় করেন বাংলাদেশের পক্ষে। দেশকে দ্রুত গড়ে তোলার জন্য ঘোষণা করেন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন নীতিমালা।
বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই আজ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক প্রতিকূলতার ধাক্কা সামলে, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে আজকের বাংলাদেশ একটি ডিজিটাল রাষ্ট্র এবং আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সুরক্ষা এবং উদ্ভাবনে ও উন্নয়নে সারা বিশ্বের সমীহ অর্জন করে নিয়েছে। জয় বাংলা বলে উন্নত বিশ্বের কাতারে নাম লেখানোর জন্য এখন আগে বাড়ছে প্রিয় দেশ।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবীদ, সংসদ সদস্য
ইবাংলা/ ই/ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১