আজ ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর পালন করা হয় দিবসটি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ দিবসটি উপলক্ষে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। এ উপলক্ষে ঢাকায় আজ নানা কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-‘শতবর্ষে জাতির পিতা সুবর্ণে স্বাধীনতা/ অভিবাসনে আনবো মর্যাদা ও নৈতিকতা।
করোনা মহামারীর দরুন বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের দুরবস্থার মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক পৃথক বানী দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে নেয়া সব কর্মসূচীর সাফল্য কামনা করেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের বহু দেশ, সরকারের সংগঠন কিংবা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা, সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে। তন্মধ্যে আলোচনা সভা, পথসভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মানববন্ধন উল্লেখযোগ্য। এ সকল বিষয়গুলোর সবটুকুই অভিবাসীদের উপজীব্য করে অনুষ্ঠিত হয়। অভিবাসীদের মানব অধিকারের বিষয়ে তথ্যের বিস্তৃতি ঘটানো এবং সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সংক্রান্ত দন্দ্ব-সংঘাত থেকে মুক্তি লাভ, অভিজ্ঞতা বিনিময়, অভিবাসীদের রক্ষার লক্ষ্যে নিশ্চয়তা বিধানে রূপরেখা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো এতে প্রাধান্য পায়।
উল্লেখ্য সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ স্থানে থাকা বাংলাদেশের অভিবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ রেমিটেন্স গ্রহণকারী দেশ। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত অভিবাসীরা ২৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছে-যা এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বড় ভূমিকা রেখেছে।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সাল থেকে ফিলিপিনো এবং অন্যান্য এশীয় অভিবাসী সংগঠনগুলো দিবসটি প্রথম পালন করতে শুরু করে। শুরুর দিকে তারা ১৮ ডিসেম্বরকে নির্ধারণ করে এবং অভিবাসীদের ঘিরে ‘আন্তর্জাতিক ঐক্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে রেখে আসা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছিল।
এর প্রেক্ষাপটে ১৮ ডিসেম্বর দিনটিকে লক্ষ্য করে মাইগ্রেন্ট রাইটস্ ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্টস রাইটস্-সহ বিশ্বের অনেক সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালায়। অবশেষে ১৯৯৯ সালের শেষার্ধে অন লাইনে ব্যাপক প্রচারণার ফলে জাতিসংঘের মুখপাত্র এ দিবসটিকে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হন।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকারসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থেকে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।
তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে দেশে-বিদেশে নারী শ্রমিকের নির্ধারিত শ্রমঘণ্টার মজুরি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন অনুসারে প্রদান করা, বাংলাদেশের অভিবাসন খরচ পৃথিবীর সকল দেশের তুলনায় বেশি, ফলে অবিলম্বে সরকারী পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে জিরো মাইগ্রেশন কস্ট করা, অভিবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে সার্বিক ব্যবস্থা করা এবং অভিবাসী কর্মীর মানবাধিকার নিশ্চিত করা, অভিবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও অবিলম্বে মাতৃত্বকালীন বেতনসহ ছয় মাস ছুটির ব্যবস্থা করা।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের অভাব, অদক্ষতা, অসচেতনতা অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অনেক পিছিয়ে রেখেছে। নারীরা বেশিরভাগ সময় পরিবারের বাইরে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিদেশে কর্মসংস্থাান সংক্রান্ত তথ্যের জন্য দালালের ওপর নির্ভরশীল থাকেন নারী অভিবাসীরা। আমাদের দেশের বেশিরভাগ সম্ভাব্য নারী অভিবাসীর বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে।
কনসার্ট ফর মাইগ্রেশন ॥ এদিকে নিরাপদ অভিবাসন সম্পর্কে সচেতনতা আজ শনিবার ‘কনসার্ট ফর মাইগ্রেন্টস’-এর আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা- আইওএম। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এই কনসার্টে গান গাইবেন দেশের ৯ জন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী। এই কনসার্টের মূল লক্ষ্য অভিবাসী এবং তাদের পরিবার পরিজনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। তথ্য ও বিনোদনের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসনের তথ্য প্রচার করা।
কনসার্ট ফর মাইগ্রেন্টস-এ গান গাইবেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, ফজলুর রহমান বাবু, ব্যান্ড দল শিরোনামহীন, লুইপা, আসিফ আকবর, কুদ্দুস বয়াতি, নন্দিতা, প্রীতম আহমেদ এবং মাশা ইসলাম। তারা কাথা বলবেন নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে। ভার্চুয়াল কনসার্টটি বিদেশে কর্মরত লাখ লাখ বাংলাদেশী অভিবাসীদের গান ও তথ্যের মাধ্যমে যুক্ত করবে। বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে অভিবাসীরা এই আয়োজন দেখতে পারবেন।
এ উপলক্ষে আইওএম-এর বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ ফাতিমা নুসরাথ গাজ্জালি বলেছেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই ‘কনসার্ট ফর মাইগ্রেন্টস’-এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশী অভিবাসীদের অবদানকে সন্মান জানিয়ে বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি কনসার্টটি শ্রোতাদের নিরাপদ, সুশৃঙ্খলএবং নিয়মিত অভিবাসন সম্পর্কে অবহিত করবে।
ইবাংলা / টিপি/ ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১