চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই- নভেম্বর) সময়ে কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে ১০ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ঋণ বিতরণের এই পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা এক হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে ৮ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা বিতরণ করে ব্যাংকগুলো। যা ব্যাংকগুলোর বার্ষিক কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও তৃতীয় মাস থেকে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটছে। যা নভেম্বরেও অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে কৃষিখাতে ২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর আগে, অক্টোবরে ২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা: সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হওয়ায় সামগ্রিকভাবে কৃষিঋণ বিতরণে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেয়। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কৃষিঋণ বিতরণ কমেছিল ২১ শতাংশ। গত আগস্টে ১ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো। জুলাইয়ে বিতরণ করা কৃষিঋণের পরিমাণ ছিল ৯৪২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে জুলাই-নভেম্বর সময়ে কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে ১০ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যদিও করোনা মহামারী দেখা দেওয়ার পর থেকে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো এ খাতের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকগুলো। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৯৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয় ব্যাংকগুলো। ওই অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী খাতে ব্যাংকগুলোর ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। অর্থবছর শেষে এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে কৃষিঋণ বিতরণ কিছুটা বাড়লেও আদায়ের পরিমাণ কমেছে। অর্থবছরের পাঁচ মাসে কৃষিঋণ আদায় হয়েছে ১০ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে কৃষিঋণ আদায় আরও বেশি ছিল। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে কৃষিঋণ আদায় হয়েছিল ১০ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে কৃষিঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।
কৃষিঋণের মধ্যে দুই ভাগে অর্থাৎ শস্য ও নন-ফার্ম (যেমন: গবাদিপশু ও মৎস্য খামার) খাতে ঋণ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে শস্যে ৮ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নন-ফার্মে ২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর গত এপ্রিলে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়।
এ ছাড়া, করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষি খাতের জন্য দ্বিতীয় মেয়াদের প্রণোদনার ঋণ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার কৃষি খাতের জন্য আরও ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের শস্য ও ফসল চাষের জন্য এককভাবে জামানত ছাড়াই ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ঋণের সুদের হার আগের মতো ৪ শতাংশই থাকছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের এই তহবিলের অর্থও বাংলাদেশ ব্যাংক তার নিজস্ব উৎস থেকে সরবরাহ করবে। তহবিলের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।
ইবাংলা / নাঈম/ ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১