ভূমধ্যসাগরে ইউরোপমুখী অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢল নেমেছে। কয়েক দিনে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাড়ে ৪০০ অভিবাসন প্রত্যাশীকে। একই সময়ে সাগরে নৌকা ডুবে মারা গেছে শতাধিক । ২০২১ এর জানুয়ারী থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৩১ হাজার অভিবাসী ব্রিটেনের উদ্দেশে ফ্রান্স উপকূল ত্যাগ করে। ১১ নভেম্বর ১ হাজার ১৮৫ অভিবাসী ইংলিশ উপকূলে পৌঁছায়।
গ্রিসে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় ২৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া লিবিয়ার উপকূলে ভেসে গেছে ২৮টি মরদেহ। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশ লিবিয়া ও তুরস্কের অপর পাশেই ইউরোপ। মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই বিপজ্জনক পথ দিয়ে ইউরোপে পাড়ি দিচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। এদের অধিকাংশই এশিয়া ও আফ্রিকার দারিদ্রপীড়িত, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে আসা। মাঝে কিছুটা কম থাকলেও আবারো ভূমধ্যসগারে বেড়েছে ইউরোপমুখী অভিবাসীর ঢল।
ভূমধ্যসাগর থেকে ২৬ ডিসেম্বর উদ্ধার করা হয়েছে ৯৬ জনকে। জার্মানিভিত্তিক উদ্ধারকারী সংস্থা এনজিও সি-ওয়াচ বলছে, মানবপাচারকারীদের সহায়তায় ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন পথ দিয়ে তুরস্ক কিংবা লিবিয়ার উপকূল দিয়ে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। গত তিন দিন ধরে সেসবের কয়েকটি জলপথ ও আশপাশে নিয়মিত টহল দিয়েছেন সি-ওয়াচের স্বেচ্ছাসেবীরা। এই তিন দিনের টহলেই উদ্ধার করা হয় এই বিপুল সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে। এত অল্প সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হলেও বিপুল মানুষ মারা গেছেন এবং এখনও বহু অভিবাসী নিখোঁজ রয়েছে বলে জানায় সংস্থটি।
গত এক সপ্তাহে গ্রিসে ২৭ জন, লিবিয়ার উপকূলে ২৮ জন এবং ফোলেগ্যান্ড্রোস দ্বীপের কাছে নৌকাডুবিতে তিনজন মারা যান। এছাড়া লিবিয়ার উপকূলে নৌযান ডুবে ১৬০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছিল। জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলতি বছরে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার ৫০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী। সমুদ্রের বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি ত্রুটিযুক্ত নৌযান ও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণেও ঘটে দুর্ঘটনা।
ফ্রান্স ও ব্রিটেনের চ্যানেলে আটকেপড়া ১৩৮ অভিবাসীকে নৌযানের সাহায্যে উদ্ধার করেছে ফ্রান্স। অস্থায়ীভাবে তৈরি নৌযানে তারা ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করে।
ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় পুলিশ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের উদ্ধারের পর তাদেরকে গ্রহণ করেছে। চ্যানেল অতিক্রমকারী গুপ্ত অভিবাসীরা ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মধ্যে বিবাদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এ বছর তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। গত মাসে ২৭ অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছে। ফ্রান্সের কালাইস বন্দরের কাছ থেকে তাদের নৌকা উদ্ধার করা হয়। এর ফলে চ্যানেল অতিক্রমের আড়ালে মানব চোরাকারবারী নীতিমালা প্রশ্নে প্যারিস ও লন্ডন নতুন করে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে।
ইবাংলা / টিপি/ ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১