ভারতে শত শত মুসলিম নারীর ছবি ব্যবহার করে একটি অনলাইন অ্যাপে বিজ্ঞাপন দিয়ে মুসলিম নারীকে বিক্রির জন্য ভুয়া নিলামে তোলার অভিযোগ উঠেছে। নিলামের বিজ্ঞাপনে বিনা অনুমতিতে শত শত এসব মুসলিম নারীর ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনায় ভারতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
শনিবার (১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলিম মেয়েদের নিলামে বিক্রির বিষয়ে একটি অভিযোগ সম্প্রতি ভারতীয় পুলিশের হাতে এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
কোনো অনুমতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে ‘নিলামের’ জন্য শত শত মুসলিম নারীর নাম ও ছবি তালিকাভুক্ত করা ভারতীয় এমন অ্যাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। গত বছরও ঠিক এরকমই আরও একটি অ্যাপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। তবে আগের বারের এই অভিযোগের সুরাহা হওয়ার আগেই ফের একই ধরনের লাঞ্ছনার শিকার হলেন ভারতীয় মুসলিম নারীরা।
বিতর্কিত এই অ্যাপটির নাম ‘বুল্লি বাই’। এটি ২০২১ সালে মুসলিম নারীদের নিলামে তোলায় অভিযুক্ত ‘সুল্লি ডিল’ অ্যাপের মতোই আরেকটি অ্যাপ বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে নিন্দার ঝড় তুলেছিল ‘সুল্লি ডিল’ অ্যাপটি। সেখানেও বিভিন্ন মুসলিম নারীদের ছবি ও নাম দিয়ে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ‘সুল্লি’ অফার করা হতো।
‘সুল্লি’ শব্দটি কট্টরপন্থি সোশ্যাল মিডিয়া ট্রোলাররা মুসলিম নারীদের অবমাননা করতে ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিদিন নতুন নতুন মুসলিম মেয়ের নাম ও ছবি দিয়ে তাদেরকে ‘ডিলস অব দ্য ডে’ বলে অভিহিত করা হতো। প্রকৃতপক্ষে কোনো নিলাম না হলেও, ওই অ্যাপটির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম নারীদের হেয় করা, অপমান করা এবং হেনস্থা করা। এমনটিই অভিযোগ করেছিলেন, ‘সুল্লি ডিল’ অ্যাপের কারণে হেনস্থার শিকার হওয়া কয়েকজন নারী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ‘সুল্লি ডিল’-এর মতো করেই কাজ করে ‘বুল্লি বাই’ অ্যাপও। অ্যাপটি খুললেই কোনো একজন মুসলিম নারীর ছবি ও নাম ‘বুল্লি বাই’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার শেয়ারিং প্লাটফর্ম গিটহাব-এ অ্যাপটি পোস্ট করা হয়েছিল।
মূলত যেকোনো ইন-ডেভেলপমেন্ট অ্যাপকে এই প্লাটফর্মে আপলোড করা যায়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতেই অ্যাপটি সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, টুইটারে সক্রিয় ও জনপ্রিয় মুসলিম নারীদেরকেই বেছে বেছে ছবি ও নাম ওই অ্যাপে ব্যবহার করা হয়েছিল। ‘বুল্লি বাই’ অ্যাপে তেমনই হেনস্থার মিকার হন মুসলিম সাংবাদিক ইসমত আরা। পরে তিনি দিল্লির পুলিশের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই বিষয়ে মামলা গ্রহণ করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে এ অভিযোগকে ঘিরে দেশটিতে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। চাপ ও সমালোচনার মুখে ভারতের কেন্দ্রীয় আইটি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গিটহাব অ্য়াকাউন্ট সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘পরবর্তী পদক্ষেপ’ নেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। মুম্বাই পুলিশের সাইবার শাখার কর্মকর্তারা ‘বুল্লি বাই’ অ্যাপের আপত্তিকর বিষয়বস্তুর তদন্ত করছে।
ইবাংলা/ টিপি/ ২ জানুয়ারি,২০২২