ইতিহাস গড়া জয় পেল টাইগাররা
ক্রীড়া ডেস্ক
বুধবার (৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবিস্মরণীয় এক দিন। স্বপ্নীল এক দিন। অবিশ্বাস্য রূপকথার মিশেলে চোখ ধাঁধানো এক সকাল। আগুনে পারফরম্যান্সে ইতিহাস গড়ল টাইগাররা। ব্যাটে-বলে দুরন্ত লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জিতল ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে দেশটিতে ছিনিয়ে নিল তারা প্রথম জয়।
এর আগে নিউজিল্যান্ড সফরে ৩২ ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই হেরেছে টাইগাররা। এবার ৩৩তম ম্যাচে কাটল জয় খরা। আর দশম টেস্টে ধরা দিল বহুল কাঙ্ক্ষিত জয় নামক সোনার হরিণ। দুর্বার এ জয়ে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অধীনে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলার জামাল ছেলেরা।
দুরন্ত ক্রিকেটে নতুন বছরে উড়ন্ত সূচনা করল বাংলাদেশ। এটা শুধু নতুন বছরের প্রথম জয়ই নয়। বর্তমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রেও প্রথম জয় পেল কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। ঘরের মাঠে টানা ১৭ ম্যাচ অজেয় থাকার পর অবশেষে হার মানল নিউজিল্যান্ড। এ নিয়ে বিদেশের মাটিতে ছয়টি টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। এসব পরিসংখ্যান ও মাইলফলককে ছাপিয়ে গেছে টানা পাঁচ দিন ক্রিকেট পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডকে শাসন করে টাইগারদের জয়ের কৃতিত্বটা।
মাউন্ট মাউঙ্গানুইয়ের বে ওভালে চার দিন ধরে মাঠের লড়াইয়ে আধিপত্য বিস্তার করে গেছে মুমিনুল হকরা। যার রেশ থাকল প্রথম টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনেও। আগের চেয়ে বরং প্রবল প্রতাপ নিয়ে লড়লো দেশের সোনার ছেলেরা। স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে গুটিয়ে দিতেই জয়টা চলে আসে হাতের নাগালে।
মুশফিকুর রহিমের ব্যাট ছোঁয়া বল মাঠের বাউন্ডারি ছুঁতেই নীরবতা ভাঙল মাঠের। কিউইদের দেয়া ৪০ রানের সহজ লক্ষ্যটা মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ছুঁয়ে ফেলে অতিথিরা। লক্ষ্য টপকে ৪২ রান তুলতেই মাঠেই গর্জে উঠেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। শূন্যে ছুঁড়লেন হাত। বুকে জড়িয়ে ধরলেন ক্যাপ্টেনকে মুমিনুল হককে। ততক্ষণে উৎসব আর উচ্ছ্বাসটা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সব ক্রিকেটারদের মাঝে।
চতুর্থ দিনে বিধ্বংসী বোলিংয়ে চার উইকেট নিয়ে টাইগারদের জয়ের ভিত গড়ে দেন এবাদত হোসেন। ক্ষুরধার বোলিংয়ের ধারাটা ধরে রেখে আজ আরও দুটি উইকেট নিলেন। তার বোলিং ফিগার ৬/৪৬। আট বছরের বেশি সময় পর বাংলাদেশের কোনো ফাস্ট বোলার ইনিংস ছয় উইকেটের দেখা পেলেন। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে দলের জয়ে রাখলেন অগ্রণী ভূমিকা রেখে হলেন ম্যাচসেরা।
তার সঙ্গে তিন উইকেট নিয়ে জয়ে অবদান রাখেন তাসকিন আহমেদও। মেহেদী হাসান মিরাজ স্পিন জাদুতে ট্রেন্ট বোল্টের উইকেট ফেলে দিতেই মাত্র ৩৯ রানের লিড নিয়ে থামে ব্ল্যাক ক্যাপস শিবিরের ইনিংস। বাকিটা তো ইতিহাস।
এবাদত হোসেন একাই শিকার করেছেন ৬ উইকেট। তাসকিন উইকেট পেয়েছেন তিনটি। দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিনের খেলা শুরু করে নিউজিল্যান্ড। আজ দলীয় স্কোরে যোগ করে তারা মাত্র ২২ রান। রস টেলর নিজের ৩৭ রানের সঙ্গে যোগ করেন মাত্র তিন রান। শূন্য রানে ফেরেন কাইল জেমিসন, টিম সাউদি ও নেইল ওয়াগনার। ১৬ রান আসে রাচিন রবীন্দ্রের ব্যাট থেকে।
সাদমান ইসলাম (৩) ও নাজমুল হোসেন শান্তর (১৭) উইকেট নেন টিম সাউদি ও কাইল জেমিসন। পরে মুমিনুল হক (১৩*) ও মুশফিকুর রহিম (৫*) জুটিতে জয়ের বন্দরে পা রাখে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৩২৮/১০ ও দ্বিতীয় ইনিংস: (আগের দিন ১৪৭/৫) ১৬৯/১০, ৭৩.৪ ওভার (টেলর ৪০, রবীন্দ্র ১৬, জেমিসন ০, সাউদি ০, ওয়াগনার ০*, বোল্ট ৯*: তাসকিন ৩/৩৬, মিরাজ ১/৪৩ ও এবাদত ৬/৪৬)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৫৮/১০ ও দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪০) ৪২/২, ১৬.৫ ওভার (সাদমান ৩, শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*, মুশফিক ৫*; সাউদি ১/২১ ও জেমিসন ১/১২)
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যাচসেরা: এবাদত হোসেন চৌধুরী।
ইবাংলা / টিআর /৫ জানুয়ারী