প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ২২ ঘরের ১৬টিতেই ফাটল
শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গোসাইরহাটে প্রধান মন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘরে ৬ মাসের মাথায় ফাটল দেখা দিয়েছে। খুবই নিচু জায়গায় প্রকল্প তৈরী করায় স্বাভাবিক জোয়ারেই উঠে যায় পানি। দুটি ঝুকিপুর্ন সাকো দিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হয়। এতে করে চরম আতংক বিরাজ করছে আশ্রয় দেয়া পরিবার গুলোর মধ্যে।
ইদিলপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইউনুছ ঢালী, আশ্রয় নেয়া মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সৈদুন নেছা ও জানান , গোসাইরহাট উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের ৯ নং মহিষকান্দি মৌজায় ৬৭ শতাংশ জায়গার উপর ২২টি পরিবারের জন্য নির্মান করা হয় ২২ টি ঘর। তার মধ্যে ১৬টিতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে ১৪টি ঘর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ঘরগুলোর মেঝো, দেয়াল ও পিলার ও রান্না ঘরে ফাটল ধরেছে।
এর মধ্যে দুটি ঘরের পিলার ধসে পড়েছে। দক্ষিণ পাশের ১ ঘরের ফিছনের বারান্দা ভেংগে পরেছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলো থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুরুতেই খুবই নিচু জায়গায় এ প্রকল্প করা হয়েছে। যেখানে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেই তলিয়ে যায়। আর এসব ঘরে বসবাসকৃতদের যাতায়াত করতে হচ্ছে ঝুকিপূর্ন দুটি বাশের সাকো দিয়ে।
গোসাইরহাট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা চৌধুরী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২) ‘ক’ তালিকার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে।
প্রতিটি ঘর তৈরীতে বরাদ্ধ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রথম পর্যায়ে নির্মিত এসব ঘর গত ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। সেমিপাকা দুই কক্ষ বিশিষ্ট এসব ঘরে একটি রান্না ঘর ও টয়লেট রয়েছে। কিন্তু ছয়মাস না যেতেই ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলে চাল দিয়ে পানি পড়ছে। ঘর তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও টাকা লুটপাটের অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর হুসাইন। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা আক্তার চৌধুরী।
উপহারভোগী লুতফা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দেওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু ঘর নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন ঠিকাদাররা। বৃষ্টি হলেই ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। কাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরের মেঝে ও পিলার ফেটে গেছে। এসব ঘর বেশি দিন টিকবেনা। আমরা আতংকে আছি।
স্থানীয় আলম বয়াতী বলেন, এখানের প্রায় সবগুলো ঘরের একই অবস্থা। কোনও ঘরের পিলার ফেটে গেছে, কোনটির চাল দিয়ে পানি পড়ে, কোনও টির মেঝোতে ফাটল ধরেছে। আবার কোনটির দেয়ালে ফাটল ধরেছে। আর সবাইকে মারাত্মক ঝুকি নিয়ে বাশের সাকো দিয়ে পাড়া-পাড় হতে হয়।
ইদিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শিকারী বলেন, বালু ভরাট করার পর তড়িগড়ি করে কাজ করার কারনে কিছু ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে আমরা মান সম্মত কাজ করেছি । পরবর্তীতে এ গুলো আমরা ঠিক করে দিবো।
গোসাইর হাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায় কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, এগুলো বিছিন্ন ঘটনা। ওই জায়গা সিলেকশন ভুলছিল। এবার অতি বর্ষণের কারণে প্রকল্পের ঘরগুলোতে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। এরপরও আশ্রয়ণ প্রকল্পটি টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। বর্ষা মৌসুম শেষে ওসব ঘর মেরামত করে দিব।
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আলমগীর হুসাইন বলেন, বর্ষার কারনে ঘরগুলো দেবে গেছে। বর্ষাকাল শেষ হলে এ গুলি ঠিক করে দেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তানভির আল নাসিফ বলেন, আমি সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছি।
এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবো, এ অঞ্চলের মাটি নরম হওয়ার কারনে ঘর গুলোর বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে বলে আমি শুনেছি। আমি এখন ও এলাকায় যাইনি এবং অচিরেই ঘর গুলো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। এরপর তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
ই-বাংলা/ ঘর ই/ ৯ জুলাই, ২০২১