পবিত্র হজ সম্পর্কে রাসূল (সা.)’র গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বাণী
ই-বাংলা ডেস্ক রিপোর্ট :
ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি হলো হজ। মহান রাব্বুল আলামিন সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলিমের উপর দ্রুত হজ সম্পাদন করা ফরজ করেছেন। সাহাবি আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহ তোমাদের প্রতি হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ কর।’ (মুসলিম)
রাসূল (সা.) এর বিভিন্ন হাদিসে হজের গুরুত্ব সম্পর্কে বিপুল আলোচনা করা হয়েছে। এরূপ দশটি হাদিস উল্লেখ করা হলো, যা থেকে আমরা ইসলামে এই বিশেষ ইবাদতের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবো-
(১) ইসলামের স্তম্ভ:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়া, নামাজ আদায় করা, জাকাত প্রদান করা, আল্লাহর ঘরে হজ করতে যাওয়া এবং রমজানে রোজা রাখা।’ (বুখারী ও মুসলিম)
(২) জীবনে কমপক্ষে একবার পালন আবশ্যক:
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘হে লোকসকল! আল্লাহ তোমাদের হজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা হজ পালন কর!’
এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, ‘প্রতি বছরেই কি, হে আল্লাহর রাসূল?’রাসূল (সা.) প্রতুত্তরে কোনো জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকলেন। লোকটি আবার প্রশ্ন করলে রাসূল (সা.) জবাবে বলেন,‘আমি যদি এখন সম্মতি জানাই, তবে তা (বছরে একবার) ফরজ হয়ে পড়বে এবং তা তোমাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে। সুতরাং, আমাকে সেখানে ছেড়ে দাও যেখানে আমি তোমাদের ছেড়ে দেই (সেসকল বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা আমি উল্লেখ না করি।)। তোমাদের পূর্বের জাতিসমূহের লোকদের বিপর্যয়ের মূলক কারণ হলো তারা অধিক (অহেতুক) প্রশ্ন করতো এবং তাদের নবীদের বিরোধিতা করতো। সুতরাং আমি যখন তোমাদের কিছু করার আদেশ দেই, তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী কর এবং যদি কোনো কিছু থেকে বিরত থাকতে বলি, বিরত থাকো।’ (মুসলিম)
(৩) বিশেষ মর্যাদা ও মূল্য:
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কোন আমলটি সর্বোত্তম?’
রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ওপর বিশ্বাস।’
তাকে (সা.) আবার জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এর পর?’
রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ।’
তাকে (সা.) আবার জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এর পর কোনটি?’
তিনি উত্তর দিলেন, ‘কবুল হওয়া হজ।’ (বুখারী ও মুসলিম)।
(৪) সংঘাতহীন জিহাদ:
হজরত আয়েশা (রা.) একবার রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘জিহাদ যেহেতু সর্বোত্তম আমল, আমাদেরও (নারীদের) কী জিহাদ করা উচিত নয়?’ রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, ‘তোমাদের জন্য (নারীদের) সর্বোত্তম জিহাদ হলো হজ।’
পরবর্তীতে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন থেকে আমি আল্লাহর রাসূলের মুখে এই কথা শুনেছি, আমি নিয়মিতভাবে হজ করার জন্য উন্মুখ থেকেছি।’ (বুখারী ও মুসলিম)।
(৫) হজরত হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) বলেছেন, একবার রাসূল (সা.) এর কাছে এক লোক এসে জানালো সে শারীরিকভাবে দুর্বল এবং ভীরু প্রকৃতির লোক। রাসূল (সা.) তখন তাকে এমন এক জিহাদে অংশ নিতে বলেন যাতে কোনো প্রকার সংঘাত বা লড়াইয়ের অস্তিত্ব নেই। এই জিহাদ হলো হজ। (আল-আলবানী)।
(৬) অপরিমেয় প্রতিদান:
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ পালন করবে এবং (হজের সময়) সকল প্রকার অশালীনতা ও গুনাহ থেকে দূরে থাকবে, সে এমনভাবে ফিরে যাবে যেমন করে তার মা তাকে (গুনাহমুক্ত) জন্ম দিয়েছেন।’ (বুখারী)।
(৭) সর্বোচ্চ সাফল্য:
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কবুল হওয়া হজের প্রতিদান আর কিছুই হতে পারে না জান্নাত ছাড়া।’ (বুখারী ও মুসলিম)।
(৮) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
‘আরাফাতের দিনের মতো আর এমন কোনো দিন নেই যেদিন আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যে পরিমান অংশকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন। এবং তিনি তাদের নিকটবর্তী আসেন এবং তাঁর ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করেন, ‘তারা কী চায়?’ (মুসলিম)।
(৯) প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য জিহাদ করে ও যে ব্যক্তি হজ পালন করে এবং যে ব্যক্তি ওমরা পালন করে, তারা সকলেই আল্লাহর প্রতিনিধি। তিনি তাদের আহ্বান করেন এবং তারা তার আহ্বানে সাড়া দেয়, তারা তার কাছে প্রার্থনা করে এবং তিনি তাদের প্রার্থনার জবাব দেন।’ (ইবনে মাজাহ)।
(১০) মূল্যবান সুযোগ:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘এই দশদিনের থেকে আর কোনো দিনেই করা আমল আল্লাহর কাছে এতটা প্রিয় নয়।’
রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এমনকী আল্লাহর পথে জিহাদও কি না?’ তিনি (সা.) বলেন, ‘এমনকী আল্লাহর পথে জিহাদও না যদি না কোনো ব্যক্তি তার সকল সম্পদসহ নিজে আল্লাহর পথে বেরিয়ে যায় এবং খালি হাতে ফিরে আসে।’ (বুখারী)।
ই-বাংলা/ আইএফ/ ১০ জুলাই, ২০২১