রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কোম্পানির সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫৩ জন নিহতের ঘটনার মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৮ জনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার (১০ জুলাই) বিকেলে, নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে তোলা হয় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও এমডি সজীবসহ আটককৃত আটজনকে। এসময় দশদিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেক আসামির চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জের আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো: আসাদুজ্জামান জানান, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে কারখানার শ্রমিকদের হত্যা ও গুরুতর জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন: সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, তার ছেলে প্রতিষ্ঠানের এমডি হাসিব বিন হাশেম, পরিচালক তারেক ইব্রাহিম, তাওসিফ ইব্রাহিম, তানজিম ইব্রাহিম, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মামুনুর রশীদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এডমিন) সালাউদ্দিন ও শাহেনশা আজাদ।
এর আগে, শনিবার (১০ জুলাই) সকালে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫৩ জন নিহতের ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন মজুমদার বাদী হয়ে এই আটজনসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে, শনিবার দুপুরে আবুল হাশেমকে তার গুলশানের বাসা থেকে আটক করা হয়। এর আগে, বাকি সাতজনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে, শনিবার সকাল থেকে আবারো উদ্ধার কাজ শুরু করে প্রায় ৪৫ ঘণ্টা পর বিকেল ৫টায় অভিযান সমাপ্ত করে ফায়ার সার্ভিস। ৫ তলার ছাদ ধসে পড়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন। তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্য বিশিষ্টি তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
ঘটনার পর শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের তদন্তে কারখানা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আগুনে ৫৩ জন নিহতের বিষয়টি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় দায়ী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, ‘আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আগুনের সূত্রপাত, কেন আগুন এত ভয়াবহ হলো, কেন এত শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে, কেনই বা আগুন লাগার পর শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হতে পারেননি। এটি দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা সবই তদন্ত করে উদঘাটন করা হবে।’
এদিকে ঢাকা মেডিক্যালে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিহতের স্বজনদের নমুনা নেয়া হয়। সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ জানিয়েছে, স্যাম্পল পরীক্ষা প্রক্রিয়া শেষে ফলাফল পেতে ৩ সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জে সেজান জুসের কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে তখন প্রায় চারশ’র বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কিকরণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট।
শুক্রবার (৯ জুলাই) ভোর ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও তিন ঘণ্টা পর আবারো জ্বলে উঠলে আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। দুপুরের দিকে ভবনটির পাঁচ তলা থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ই-বাংলা/ আইএফ/ ১০ জুলাই, ২০২১