অযোগ্য এনজিওকে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রমের দায়িত্ব
এম বি কাজী নাছির,শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরে ঝড়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক ডিজির বিরুদ্ধে অযোগ্য এনজিও (সার্প) কে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে । এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হওয়ার আশংকা রয়েছে। পাশাপাশি ব্যহত হচ্ছে উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম।
এ দিকে অনুমোদিত এনজিও (সার্পে) এর নির্বাহী পরিচালক বলছেন, নিয়ম মেনেই আমাদেরকে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে । অপরদিকে ডিজি বলছেন আমি যোগদানের পূর্বে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো । বিষয়টি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায় , গত ১৬ জুলাই ২০২০ সালে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়নের অধীনে, আউট অব স্কুল চিলড্রেন ’ তথা ঝড়েপড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। সেই লক্ষ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়নের সাথে ৬১ টি সংস্থার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়।
সেই চুক্তিতে শরীয়তপুরে সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন ফর রুরাল পোভার্টি (সার্প) নামের একটি এজিও চুক্তিবদ্ধে হন। প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই উক্ত এনজিও সার্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দূর্নীতির চিত্র ।
বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত প্রথম শর্তে বলা হয়েছে যে, কোন প্রকল্প অনুমদোন পেতে হলে ১০ বছরের উপ- আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্ত সার্পের সে ধরনের কোন বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত দ্বিতীয় শর্তে বলা হয়েছে, স্বচ্চতা, সততা, ন্যায় পরায়নতা ও তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৩ বছরের পূর্নাঙ্গ অডিট রিপোর্ট থাকার বিধান রয়েছে। কিন্ত সার্পের সে ধরনের কোন অডিট রিপোর্ট বাস্তবে নেই।
বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত তৃতীয় শর্তে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানতের মানব সম্পদ পলিসি, জেন্টার পলিসি, শিশু সুরক্ষার নীতিমালা, ক্রয় ও হিসাব ব্যবস্থাপনা বাধ্যবাধকতা মূলক। কিন্ত সার্পের সেই ধরনের কোন কাগজ পত্র ছিল না। সার্পের মুল হিসেবে নুন্যতম ২৫ লাখ টাকা স্থিতি থাকার কথা থাকলে ও তা সেই হিসাব নম্বারে সেই পরিমান টাকা ছিল না।
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সুবিধা সহ প্রস্তাবিত ৫ টি উপজেলাতে নিজস্ব অফিস থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তাদের কোন অফিস ছিল না। অন্য প্রতিষ্ঠানে সার্পের সাইন বোর্ড লাগিয়ে নিজের অফিস হিসেবে প্রদর্শন করেছেন।
পেশাগত দক্ষতা, একাধিক স্টাফ থাকার বিধান থাকলেও শরীয়তপুওে অবস্থিত আরেকটি এজিও নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির (নুসার) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মো: কবীর হোসেনকে তাদের স্থায়ী কর্মকর্তা হিসাবে দেখানো হয়েছে। প্রজেক্ট প্রফাইলে যে সকল কর্মকতা ও কর্মচারীদেরকে দেখানো হয়েছে , তা বাস্তবে কখনোই ছিল না।
অভিজ্ঞাতার ক্ষেত্রে শরীয়তপুর জেলায় ২৫ জন যৌন কর্মীর কন্যা শিশুকে আশ্রয়সহ শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে তাদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করেছে। যা আদৌ সত্য নয়। পাশাপাশি তাদের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে মাদারীপুর জেলার শিবচর ও গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানার বিভিন্ন এলাকার কথা বলা হয়েছে।
বাস্তবিক অর্থে শরীয়তপুর সদর ছাড়া অন্য কোথাও কোন অফিস ছিল না। তদন্তে দেখা যায়, প্রকল্প পেতে সার্প যে সকল কাগজপত্র উপাস্থাপন করেছেন তা সমস্তটাই ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে। ডিজি সাহেব এ সব ভুয়া কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই বাছাই না করে সার্পকে অনুমোদন দিয়েছেন।
এই অনভিজ্ঞ এনজিওকে অনুমোদন দেয়ায় কোটি কোটি টাকা লোপাট হওয়ার আশংকা রয়েছে। কিভাবে ডিজি সাহেব সার্পেও মতো একটা অনভিজ্ঞ এনজিওকে অনুমোদন দিলেন, তা নিয়ে সুশীলসমাজের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন অফ রোরাল পোভার্টি (সার্প) এর নানা রকম অনিয়মের তদন্ত করার জন্য শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার সুজন চৌধুরী নামক একজন মহা পরিচালক দূর্ণীতি দমন কমিশন বরাবওে লিখিত আবেদন করেছেন ।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি (নুসা ) এর উপ-পরিচালক মোঃ কবীর হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ নুসাতে কর্মরত আছি। আমাকে যে সার্পের প্রোগ্রাম প্রধান হিসাবে দেখানো হয়েছে, সেটি অন্যায় ও অবৈধ। আমি কখনোই সার্পের প্রোগ্রাম প্রধান ছিলাম না।
সোসাল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সোডেপের ) নির্বাহী পরিচালক এম শামীম খন্দকার বলেন , শরীয়তপুরে ঝড়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন রুরাল পোর্ভাটি (সার্প) যে মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট, জাল , জালিয়াতির তথ্য দিয়ে কাজ পেয়েছে, সে কাজ বাতিল করে তাকে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। তা না হলে এনজিও এর প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে।
সার্পের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাসেমকে অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি কিভাবে প্রকল্প পেয়েছি, তা আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন, ডিজি সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেন।
শরীয়তপুর জেলার উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক হুমাযুন কবীর সরদার বলেন, সবার জন্য শিক্ষা কর্মসুচী বাস্তবায়ন করার জন্য ৮ হতে ১৪ বছর বয়সী স্কুল ড্রপ আউট ও নিরক্ষর কিশোর কিশোরীদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় চাল করা হবে। সে লক্ষে শরীয়তপুর জেলার ৬ টি উপজেলায় সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন রুরাল পোর্ভাটি (সার্প) কে নির্বাচিত করেছে ডিজি অফিস সেখানে আমার কোন হাত নেই । যারা এ কাজের টেন্ডার দিয়েছেন। তারা যাচাই বাছাই করেই কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর তৎকালীন মহা পরিচালক ( ডিজি) তপন কুমার ঘোষ বলেন , সোসাইটি ফর এলিভিয়েশন রুরাল পোর্ভাটি (সার্প) কে নীতিমালা মেনেই, কাগজ পত্র পর্যালোচনা করেই বে- সরকারী সংস্থা কে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
ইবাংলা/ ই/ ২৬ জানুয়ারি,২০২২