অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে সোমবার (৩১ জানুয়ারি)। কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করবেন। ঘটনার প্রায় ১৮ মাস পর ১২ জানুয়ারি রায়ের এ দিন ধার্য করেছিলেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছে সিনহার পরিবার।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় তিনটি মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে টেকনাফে দুটি ও রামুতে একটি করা হয়। ঘটনার পাঁচদিন পর ৫ আগস্ট টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
একই বছরের ৬ আগস্ট প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য, প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর ২৪ জুন চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেব আত্মসমর্পণ করলে এ মামলার ১৫ আসামিই আইনের আওতায় আসেন।
ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। এতে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বর্তমানে কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ। এছাড়া টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পিপি ফরিদুল আলম জানান, এ মামলায় আট দফায় ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা করা হয়। এরপর ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে আদালত রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিনহাকে যে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে আদালতে আমরা তা প্রমাণ করতে পেরেছি। প্রদীপ, লিয়াকতসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি।
আসামি প্রদীপের পক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডে ওসি প্রদীপ জড়িত ছিলেন না। মামলার অ্যাভিডেন্স অনুযায়ী তিনি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। এছাড়া আসামি লিয়াকতের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার দাশ।
ইবাংলা / নাঈম/ ৩০ জানুয়ারি, ২০২২