প্রদীপ-লিয়াকতসহ কোন আসামির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার

কিছুক্ষণ পরই ঘোষণা করা হবে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়। গত ১২ জানুয়ারি আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবীর অসমাপ্ত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে এ দিন ধার্য করে আদালত। চাঞ্চল্যকর এ মামলার অভিযোগপত্রে ওসি প্রদীপ-ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ ১৫ জন আসামির নাম এসেছে।
এক নজরে জেনে নিন কোন আসামির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ-

Islami Bank

প্রদীপ কুমার দাশ: টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি। তিনি মেজর সিনহা হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি। তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, প্ররোচনা ও জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দিয়ে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগও তোলা হয় তার বিরুদ্ধে।

লিয়াকত আলী: বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক আইসি। তিনি সিনহা হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি। অভিযোগপত্র বলছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান গুলি করে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন লিয়াকত।

নন্দদুলাল রক্ষিত: বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই। মামলার ৩ নম্বর আসামি তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর সহযোগী হিসেবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সিনহা হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছেন। ওসি প্রদীপের অবৈধ আদেশে সিনহার প্রাইভেটকার থেকে ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার না হওয়া সত্ত্বেও ভুয়া জব্দ তালিকা করেছেন। নিহত সিনহা ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সিফাতের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন।

নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আইয়াছ উদ্দিন: তিনজনই টেকনাফ থানা পুলিশের সোর্স এবং সাজানো মামলার সাক্ষী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- ঘটনার শুরুতে তারা ওসি প্রদীপ ও লিকায়তের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। সিনহাকে ডাকাত সাজিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে সিনহার চলাচলের খবর লিয়াকতকে ফোনে জানিয়ে দেন। পরিকল্পনা ও যোগসাজশের মাধ্যমে তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটান।

one pherma

লিটন মিয়া, সাফানুর করিম, কামাল হোসেন আজাদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন: চারজনই বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের কনস্টেবল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা আহত গুলিবিদ্ধ সিনহাকে যেন কেউ সাহায্য করতে না পারে সে জন্য অস্ত্রসহ ঘটনাস্থল পাহারা দেন। তারা নাক, চোখ বেঁধে সিনহার সঙ্গী সিফাতকে নির্যাতনে সহায়তা করেন। হাসপাতালে নেয়ার সময় তারা সিনহাকে বস্তার মতো ছুঁড়ে গাড়িতে তোলেন।

রুবেল শর্মা ও সাগর দেব: দুজনই টেকনাফ মডেল থানার সাবেক কন্সটেবল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- ওসি প্রদীপের করা শতাধিক বন্ধুকযুদ্ধে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করেন তারা। ঘটনার দিন মাদক নাটক সাজানো, সিফাতকে মারধর এবং ওয়াটার থেরাপি দিয়ে নির্যাতন করেন রুবেল শর্মা ও সাগর দেব।

শাহজাহান আলী, রাজীব হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ইমন: এসআই মো. শাহজাহান আলী, কনস্টেবল রাজীব হোসেন এবং আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ইমন এপিবিএন সদস্য ঘটনার দিন রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এসআই মো. শাহজাহান আলী সিফাতকে রশি দিয়ে বেঁধে এবং অন্য দুই জন সিনহার পড়ে থাকা দেহ ঘেরাও করে রেখে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পাঁচদিন পর ৫ আগস্ট ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ইবাংলা /নাঈম/ ৩১ জানুয়ারি, ২০২২

Contact Us