রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কাপড় আর ফুল বিক্রির আড়ালে মো. আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির ইয়াবা ব্যবসা করতো। সম্প্রতি শরীয়তপুরে বাবা চাতক শাহ স্মরণে একটি মাজার নির্মাণ করে নিজেকে অন্য পরিচয়ে উপস্থাপনের চেষ্টাও করছিলেন সে। শুক্রবার ( ১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ানে বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, কক্সবাজার ও টেকনাফের মাদক চোরাচালানকারী চক্রের সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন পিচ্চি মনির।
রাজধানীর হাজারীবাগ ও ধানমন্ডি এলাকায় মাদক ব্যবসার অন্যতম হোতা ও হত্যা মামলার আসামি মো. আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির ও তার সহযোগী জুবায়ের হোসেনকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে একাধিক বিদেশি অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, পিচ্চি মনিরের পরিবার জীবিকার সন্ধানে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় আসে। লালবাগের শহীদনগর এলাকায় বসবাস শুরু করে। বাবার ফলের ব্যবসায় সহায়তা করতো মনির। একসময় সে এলাকার বখে যাওয়া ছেলেদের সঙ্গে যোগ দিয়ে চুরি, ছিনতাই শুরু করে।
ধীরে ধীরে সে এলাকার বখাটেদের নিয়ে লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি অপরাধ চক্র গড়ে তোলে। এ চক্রটি ব্যবহার করে সে মাদক ব্যবসা শুরু করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় সে ও তার জনৈক বন্ধু মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়। প্রথমে স্থানীয় মাদক ডিলারদের কাছ থেকে অল্প করে মাদকদ্রব্য কিনে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করতো। ২০১৬ সালে কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার মাদক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। এরপর টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে তার কাছে নিয়মিত ইয়াবা আসতো। মাঝেমধ্যে সে ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকা থেকে কক্সবাজার গিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসতো। মূলত তারা মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করতো। শতকরা ২০ শতাংশ হারে অ্যাডভান্স পেমেন্টের মাধ্যমে ইয়াবা ঢাকায় আনা হত। মাদকের ডেলিভারি ও লেনদেন মনিরের ভাড়া বাসায় বা সুবিধাজনক স্থানে সম্পন্ন হত। মনির ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটে হিসেবে ছদ্মবেশে মাদকের ব্যবসা করতো।
মনির র্যাবকে আরো জানায়, সে প্রতিমাসে কয়েকটি চালান টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনতো। মিরপুর-১৩, ইসলামবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুরসহ আরো কয়েকটি স্থানে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাদক সরবরাহ করতো। প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো সে।
কৌশলগত কারণে খুচরা বিক্রেতাদের কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ ছিল না। কেউ কাউকে চিনতো না। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর তাকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। সে এক একটি এলাকায় এক-দুই বছরের বেশি অবস্থান করতো না। সে শরীয়তপুরে নিজের বাড়িতে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সে তার বাবার নামে এলাকায় একটি মাজার নির্মাণ করছে।
র্যাব জানায়, মনির ২০১৮ সাল থেকে অস্ত্র ব্যবসা শুরু করে। সে ২০১৮ সালে অবৈধ পিস্তলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় এবং সাত মাস কারাগারে থাকে। পরে ২০২০ সালে সে অস্ত্র ও মাদক মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। এ সময় সে এক বছর কারাগারে ছিল। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত তিনটি মামলা রয়েছে।