ছেঁড়া রুটির ফেরী নিয়েই দিনযাপন কিশোর রমজানের
সাইদুর রহমান তসলিম,নরসিংদী :
নিতান্তই কচি মুখের পিতৃমাতৃহীন একটি বালক। নাম তার রমজান, বয়স বড় জোর ১২ হবে। বই খাতা কলম নিয়ে পড়াশোনা ও খেলাধূলোয় সময় পেরোবার সময় থাকলেও কাক ডাকা ভোরে সুখের ঘুম বিসর্জন দিয়ে বেরিয়ে পড়ে ছেঁড়া রুটির ফেরী নিয়ে। লালশালুতে হালুয়া -রুটি ঢেকে ঠেলাগাড়ী ঠেলে ঠেলে দীর্ঘপথ যেতে হয় তাকে নিত্যদিন।
উপোষ পেট শুষ্ক মুখ, নাস্তা বলতে কিছুই জুটে না পেটে। বেচাবেচি শেষ করে ডেড়ায় ফেরে দুপুর নাগাদ। তারপরই একেবারে দুপুরের খাবার জুটে। এ-ই তার নিত্যদিনের রুটিন। আর এভাবেই জীবন জীবিকার সংগ্রাম চলছে রমজানের।
গাড়ীর বহর ঢুকছিলো মনোহরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে। রমজান ফিরছিলো তার নিত্যদিনের ছেঁড়া রুটি ফেরী করে। গাড়ীর বহর দেখে বিস্ময় বিমূঢ় হতবাক সে।পুলিশের গাড়ীর সাইরেনে এক পাশে সরে গেলো পসরা নিয়ে।তাজ্জব বনে গেলো এতোসব উৎসবের আয়োজন দেখে।মাত্র শৈশব পেরোচ্ছে রমজান।
গাড়ীগুলো উপজেলা পরিষদের গেট পেরোতেই ছেঁড়া রুটির পসরা একপাশে ঠেলে দিলো।তারপর রাজ্যের উৎসুক্য নিয়ে ছুটলো সেখানে ।কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলে কথা হলো রমজানের সাথে।একদা বাড়ী ছিলো তার ব্রাম্মনবাড়ীয়ার নাসির নগরে। গ্রামের নাম শ্রীঘর।পিতা খোকন।
খালার বাড়ীতে বড়ো হয়ে মাস ছয় হলো মনোহরদী এসেছে চাচাতো ভাইয়ের কর্মচারী হয়ে। খুব ভোরে ছেঁড়া রুটির ফেরী নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে একটা ঠেলামতো গাড়ী। তাতে থাকে জাম্বু সাইজের ১২টি রুটি ও হালুয়া। লাল শালুতে ঢাকা থাকে সেসব।
ছিঁড়ে ছিঁড়ে রুটি বেচে বলে নাম তার ছেঁড়ারুটি। রমজান জানায়,সবগুলো রুটি বেচা হলে দৈনিক ২শ’ টাকা বেতন মেলে।বেচা কম হলে বেতন কম। থাকা খাওয়া মহাজনের। বেতনের টাকা জমাচ্ছে বলে জানালো রমজান। ১০/১২ হাজার টাকা জমেছে ইতোমধ্যে মহাজনের কাছে।
ভালো একটা পুঁজি হলে দেশের বাড়ী গিয়ে বিশ্বরোডে ব্যবসার ইচ্ছে তার।এতো বেলা পর্যন্ত অভূক্ত কেন সে?- আগে মহাজন নাস্তা দিতো। মালের দাম বাড়তি বলে এখন আর দেয় না,জবাবে জানালো সে। – এখান থেকে হালুয়া রুটি খেয়ে নিলেই পারো। না! তা পারে না সে, কারন তাহলে তার পাওনা টাকা থেকেই যে কর্তন হয়।
এ যেনো ‘চারদিকে জল আর জল,কিন্তু আমার পান করার জন্য এক ফোঁটা জলও কোথাও নেই।’ছেঁড়া রুটি বেচে কতো মানুষের নাস্তার জোগান দেয় সে,কিন্তু নিজের ভাগ্যে জুটে না সে রুটি আর।
ইবাংলা/ ই/ ১৭ ফেব্রুয়ারি,২০২২