রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে সাকিবদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা
ইবাংলা স্পোর্টস
ফাইনালে এর আগে দুইবার (২০১৫ ও ২০১৯) খেলা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স হারেনি, তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হবার লক্ষ্যে বরিশালের বিপক্ষে খেলতে নেমে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুলেছে কুমিল্লা। ১৫১ রানের লক্ষ্য দিয়েও শেষ পর্যন্ত বরিশালকে বেঁধে ফেলে ১৫০ রানে। স্বল্প পুঁজি নিয়ে দুর্দান্ত বরিশালকে শেষ পর্যন্ত আঁটকে দিয়েছে কুমিল্লা জয় তুলে নিয়েছে ১ রানে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সবশেষ আসরে (২০১৯) চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এবারের আসরের শক্তির বিচারে দুই দলই ছিল সমান। দুই দলেই ছিল তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেল। শেষ পর্যন্ত দুই দলই খেলেছে ফাইনালে।
তবে শুক্রবার রাতে ফাইনালের মহারণে বরিশালকে এক রানে হারিয়ে তৃতীয়বার শিরোপা জয়ের স্বাদ নিলো কুমিল্লা। মিরপুরের শের ই বাংলা স্টেডিয়ামে কুমিল্লার দেয়া ১৫১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওপেনার মুনিম শাহারিয়ার দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন রানের খাতা না খুলে। শহিদুল ইসলামকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দেন বৃত্তের ভেতরে থাকা ফাফ ডু প্লেসির হাতে।
মুনিমের বিদায়ের পর ক্রিস গেইলকে নিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন সৈকত আলী। মাত্র ২৬ বলে দশটি চার ও এক ছয়ে পূর্ণ করেন ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ৫৭ রান করে ক্যাচ দেন ইমরুল কায়েসের হাতে তানভির ইসলামের বলে। গেইল-সৈকতের জুটি থেকে আসে ৫১ বলে ৭৪ রান।
গোটা টুর্নামেন্টে গেইল ছিলেন সাদামাটা। বয়সের ভার যে নিতে পারছিলেন না এই ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব সেটা ছিল স্পষ্ট। ৩১ বলে ২ ছক্কা ও এক চারে ৩৩ রান করে এলবিডব্লু হন স্বদেশী সুনীলের বলে।
দলীয় ১০৭ রানে গেইলের বিদায়ের পর বরিশালের দরকার ছিল ৪৫ রান। ব্যাত করতে নেমে সাকিব আল হাসান ৭ বলে ৭ রান করে ক্যাচ দেন তানভির ইসলামের বলে। পয়েন্টে থাকা মোস্তাফিজ দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে চাপে ফেলেন বরিশালকে।
চাপটা আরও বেশি বেড়ে যায় দলীয় ১৩৩ রানের মাথায় সোহানের রান আউট। ১৩ বলে ১৪ রান করে সাজঘরে ফিরে বিপাকে ফেলেন দলকে। তাতে পেন্ডুলামের মতো সমানতালে ম্যাচ ঝুঁকে যায় দু’দলের দিকে। এক রান পর ১৩৪ রানের মাথায় ডোয়াইন ব্রাভোকে ১ রানে এলবিডব্লু করে ফেরান সুনীল নারিন।
জিততে হলে শেষ দুই ওভারে ১৬ রান লাগত বরিশালের। মোস্তাফিজের করা ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শান্ত সাজঘরে ফেরেন ১২ রানে এলবিডব্লু হয়ে। এই ওভারে মোস্তাফিজ দেন ৫ রান।
শেষ ওভারে ১০ রান লাগত বরিশালের। স্ট্রাইকে থাকা তৌহিদ হৃদয় সোজা মারলেও ঠেকিয়ে দেন বোলার শহিদুল। পরের বলে অফ সাইডে বল ঠেলে ১ রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেন হৃদয়। তৃতীয় বলে এক রান নেন মুজিব। পরের বল বলটা ওয়াইড হলেও চতুর্থ বলে দুই রান নেন হৃদয়। পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দিলেও হাত ফসকে যায় তানভিরের। শেষ বলে ৩ রান আর নিতে পারেননি কুমিল্লা। শেষ বলে রান আউট হন মুজিব। ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানে থামে কুমিল্লা।
কুমিল্লার পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন সুনীল নারিন ও তানভির ইসলাম। ১টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম।
এর আগে সন্ধ্যায় টস জিতে ব্যাট করতে নীম কুমিল্লার ওপেনার সুনীল নারিন ঝড় তোলেন চার-ছক্কার। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের ম্যাচে চট্টগ্রামের বিপক্ষে মাত্র ১৩ বলে তুলেছিলেন বিপিএলের দ্রুততম ফিফটি। আজও ঝড় তুলেছিলেন ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে।
মুজিবুর রহমানের করা প্রথম ওভারে দুই ছয় এক চারে নেন ১৭ রান। দ্বিতীয় ওভারে শরিফুলকে মারেন দুই ছয় এক চার। ফিফটি তুলেন মাত্র ২১ বল।
সুনীলের ব্যাটে কুমিল্লা উড়লেও হতাশ করেন লিটন দাস (৪)। নারিন সাজঘরে ফেরেন ২৩ বলে সমান ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৫৭ রান করে মেহেদী হাসান রানার বলে লং অনে থাকা নাজমুল হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
নারিনের ফেরার পর মাহমুদুল হাসান জয় রান আউট হন ৮ রানে। ফাফ ডূ প্লেসি এদিন ৪ রানে ফেরেন মুজিবের বলে কট এন্ড বোল্ড হয়ে। অধিনায়ক ইমরুল কায়েস জ্বলে উঠতে পারেননি দলের বিপদে। ১২ বলে ১২ রান করে ক্যাচ দেন ডোয়াইন ব্রাভোর বলে। আরিফুল হককে রানের খাতাই খুলতে দেননি মুজিব।
৯৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মঈন আলী। শুরুতে ধীরে রান তুললেও শেষে আবু হায়দার রনিকে নিয়ে রান তোলেন দ্রুত। রনির সঙ্গে ৫৩ (৫১) রানের জুটি গড়ে মঈন বিদায় নেন রান আউট হয়ে ৩২ বলে ৩৮ রান করে।
শেষ দিকেরনি ১৯ (২৭) রান করে রনি ফেরেন শফিকুলের বলে কট এন্ড বোল্ড হয়ে। পরের বলে শহিদুলকেও (১) ফেরান শফিকুল। শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৫১ রান।
বরিশালের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন মুজিব ও শফিকুল। ১ উইকেট করে নেন সাকিব, ব্রাভো ও মেহেদী।
ইবাংলা/ এইচ/ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২