সময় তখন দুপুর ১টা। চায়ের কাপে আড্ডা চলছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাঁলচত্বরে এমন সময় দৃষ্টি দিতেই দেখা যাচ্ছে মধ্যবয়সী এক সাইকেল ফেরিওয়ালাকে। সাকলেকের হাতল ও পেছনের সিটে সাজানো লাল সবুজের মিশ্রনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে চলছে তার বিচরণ। অনেকেই তার কাছ থেকে জাতীয় পতাকা ক্রয় করছে। সময়ক্ষেপন না করে ছুটলাম তার দিকে।
বলছিলাম উজ্জল উদ্দীন শেখ এর কথা। তিনি দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলায় স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন অঞ্চলে পতাকা ফেরি করেন। উজ্জল উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার, কুমারখালি থানার মহন নগর গ্রামে। তার বয়স ৪৫। তিনি ১৬ বছর বয়সেই দেশপ্রেমের টানে এই পেশাতে নামেন। পতাকা বিক্রি করেই সংসার চলে তার। এর ফাঁকে তার ছোট্র একটি চার চায়ের দোকান ও আছে। পতাকা বিক্রির মাঝে সকাল সন্ধ্যায় সেখানে সময় দেন। দিনের কর্মচাঞ্চল্য শুরু হতেই বেড়িয়ে পড়েন পতাকা নিয়ে। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের পাশাপাশি গ্রামেও তার নিয়মিত চলাচল। দেশের প্রতি ভালবাসার টানে অনেকেই তার কাছে সাড়া দিয়ে জাতীয় পতাকা কিনে নেন।
বছর জুড়েই চলে তার পতাকা বিক্রয়। বিশেষ করে বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তিনি প্রচুর পতাকা বিক্রি করেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ইবি ক্যাম্পাসে এই প্রথম তার আগমন। তার কাছ থেকে অনেকেই মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেশের সবুজের বৃত্তে লালের প্রতিক ক্রয় করছেন। যেটি সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রঙ উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বীর বাঙালির রক্তে দিয়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা এবং আমাদের গৌরবের প্রতীক।
তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই লাল-সবুজের পতাকা বিক্রয় পেশাতে জড়িত। তার কাছে মেলে ১০ টাকা, ২০ ও পঞ্চাশ টাকার লাল-সবুজ। ভালবাসার টানেই তার এ যাত্রা। কুড়িয়েছেন অসংখ্য মানুষের ভালবাসা। ছোট শিশুদের বিনামূল্যে দিয়ে দেন পতাকা। এতে নিজের ভিতরে অন্যরকম ভাললাগাও কাজ করে। ভালবাসার এ জায়গা থেকেই টেনেটুনে চলছিল তার সংসার। দীর্ঘ তিন বছর ধরে করোনা মহামারীর কবলে পড়ে বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভাটা পড়েছে পতাকা বিক্রিতে। এ পতাকা বিক্রি করেই চলে তার সংসার। সংসারে রয়েছে তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী। করোনা সময়ে বিক্রয় কম হওয়ায় ৬ সদস্যর এ সংসারে পড়ে টানাপোড়ন। পাননি কোন সহায়তাও।
উজ্জল উদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি সাধারণ পরিবারে গড়ে উঠা মানুষ। পতাকা বিক্রয় ও চায়ের দোকান দিয়েই চলে সংসার। কখনো আমি সরকারের কাছ সহযোগীতা পাইনি। টানাপোড়নের এ সংসারে সরকারের সামান্য সহায়তা পেলেও আমার জন্য অনেক উপকার বয়ে আনতো।’
তিনি আরো বলেন, ‘পতাকা বিক্রয় পেশাতে এসে অসংখ্য মানুষের ভালবাসা পেয়েছি এ ভালবাসাই আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। যতদিন বাঁচবো এ পেশাকে ধরে রাখব। দেশপ্রেম দুয়ারে দুয়ারে বিলিয়ে দিব।’
আর এম রিফাত,
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইবাংলা/এইচ/ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২