আদালতের আদেশ অমান্য ডিপিডিসির

আমিনুল ইসলামঃ

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি’র) কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে পদোন্নতি নিয়ে তোরজোড় চলছে বিদ্যুৎ ভবনে।

পদোন্নতি নিয়ে রয়েছে আদালতের নির্দেশনাও। তবুও কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই সংস্থাটি তড়িঘড়ি করে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পদে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পদোন্নতি দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

অভিযোগ রয়েছে-উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ডিপিডিসিতে উপবিভাগীয় পদে পদোন্নতি দিতে একটি সার্কুলার জারি করেন। সার্কুলারে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ১৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিন সাক্ষাতের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়।

এরই মধ্যে বিষয়টিকে উচ্চ আদালতের দেয়া রায়কে উপেক্ষা করা হচ্ছে মর্মে উল্লেখ করে আলাদাভাবে আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ পাওয়ার সেক্টরস ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারর্স ফেডারেশন এবং ডিপিডিসির পদোন্নতির দিকনির্দেশনা চেয়ে আদালতে রিটকারীরা। ডিপিডিসির পদোন্নতির পরীক্ষা স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসির একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থ হাসিলে একটি দুষ্ট চক্র ডিপিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানের সরলতার সুযোগ নিয়ে ফায়দা লুটছে। আবার এসব কাজে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ব্যবহার করে তারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর ফলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক সূত্রে জানা যায়, ‘ডিপিডিসির দুষ্ট চক্রটি উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পদে পদোন্নতিকে টার্গেট করে সম্প্রতি চাঁদপুর থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার ইলিশ মাছ সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তাকে দিয়েছেন। আর চাঁদপুর থেকে এই মাছ সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন চক্রটির সদস্য একজন উপসহকারী প্রকৌশলী।

বাংলাদেশ পাওয়ার সেক্টরস ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারর্স ফেডারেশনের সভাপতি ফজলুর রহমান খান বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ২০১৭ সালের আগে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত তাদের চাকরির বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিতে হবে।

এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিপিডিসি আবার আপিল করেছে। সেই আপিল চলমান থাকলেও ডিপিডিসি বেআইনি পন্থায় উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পদে তড়িঘড়ি করে পদোন্নতি দেয়ার চেষ্টা করছেন। যা ব্যক্তিস্বার্থে এবং সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যমূলক।

জানা গেছে, ডিপিডিসিতে পদোন্নতির দিকনির্দেশনা চেয়ে সংস্থাটির কর্মরতরা উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করেন। রিটের শুনানি শেষে আদালতের রায়ে বেশ কিছু নির্দেশনার পাশাপাশি চাকরিতে এসিআর এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিতে বলেছেন বলে জানা যায়। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আপিল করে ডিপিডিসি।

আপিলটি এখনো বিচারাধীন থাকলেও কার স্বার্থে তড়িঘড়ি করে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দিতে একটি সার্কুলার জারি করে সংস্থাটি। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর দোহাই দিয়ে সার্কুলার জারির ৪ দিন পরেই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষা। আর তাই বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের কথা শুরু হয়েছে।

গুঞ্জন রয়েছে ডিপিডিসির একটি চক্র নিজেদের চুক্তি করা পছন্দের প্রার্থীকে পদোন্নতি দিতে পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছেন। এ লক্ষ্যে ডিপিডিসির ৫ কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি দল প্রায় দুই কোটি টাকা নিয়েছে বলেও গুঞ্জনে জানা যায়। আর এই টাকা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কাছে দেয়া হয়েছে। তিনিই এ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করবেন বলেও জানা যায়।

পদোন্নতির টার্গেটে টাকা নেয়া পাঁচজন ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন নির্বাহী পরিচালক পদের একজন যার নামের আদ্যাক্ষর ‘র’, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ২ জন যাদের নামের আদ্যাক্ষর ‘র’ এবং ‘ম’, উপসহকারী প্রকৌশলী একজন যার নামের আদ্যাক্ষর ‘শ’ এবং অপর একজনের নাম পদবি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।

জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমরা নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই পদোন্নতি পরীক্ষা নিতে যাচ্ছি। উচ্চ আদালতে এ ব্যাপারে আপিল বিচারাধীন থাকাকালে এই পদোন্নতি আইনসিদ্ধ কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব আইন-কানুন মেনেই আমরা পরীক্ষা নিচ্ছি।’ পদোন্নতি নিয়ে ঘুষ লেনদেনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কারা এ ব্যাপারে টাকা নিয়েছে খুঁজে বের করেন।’

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব এবং ডিপিডিসি পরিচালনা পর্ষদ ও নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ডিপিডিসির পদোন্নতি বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা এবং পরবর্তীতে দায়ের করা আপিলের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’ পদোন্নতি নিয়ে ঘুষ লেনদেনের ব্যাপারে জানতে চাইলে দুঃখ প্রকাশ করে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ‘এসব কথা শুনলে মন খারাপ হয়ে যায়। আমি বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই খোঁজ নেবো।’

ইবাংলা/ জেএন/ ৫ মার্চ, ২০২২

Contact Us