রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে সাত বছর আগে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলার মামলায় আসামি আরমানের ১০ বছর এবং কবিরের ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া খালাস দেয়া হয়েছে ৬ জনকে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকালে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে তিন জঙ্গিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে এনে আদালতে তোলা হয়।
২০১৫ সালের ২৪শে অক্টোবর আশুরা উপলক্ষে পুরনো ঢাকার হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় সেখানে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এতে দু’জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ।
২০১৭ সালের ৩১শে মে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। ২০১৮ সালে সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনাল নাবালক জাহিদ হাসান ও মাসুদ রানাকে বিচারের জন্য শিশু আদালতে পাঠায়।
এ মামলার আট আসামির সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ- জেএমবির সদস্য। তাদের মধ্যে কবির হোসাইন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক, রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব ও আরমান ওরফে মনির কারাগারে ছিলেন, তাদের এজলাসে হাজির করা হয়েছে।
জামিনে থাকা পাঁচ আসামি ওমর ফারুক মানিক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, শাহজালাল মিয়া, চান মিয়া, আবু সাঈদ রাসেল ওরফে সোলায়মান ওরফে সালমান ওরফে সায়মনও উপস্থিত আছেন আদালতে।
আলোচিত এ মামলার রায় শুনতে আদালতে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টেট কোর্টের সাত সদস্য। আদালত ভবনের প্রবেশপথে ও বারান্দায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে নাম থাকা আসামিরা হলেন- ওমর ফারুক মানিক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, শাহজালাল মিয়া, চান মিয়া, কবির হোসাইন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক, রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব, আবু সাঈদ রাসেল ওরফে সোলায়মান ওরফে সালমান ওরফে সায়মন, আরমান ওরফে মনির, মাসুদ রানা, জাহিদ হাসান।
এদের মধ্যে জাহিদ হাসান এবং মাসুদ রানাকে তাদের আইজীবীরা ‘নাবালক’ দাবি করায় জন্মসনদ পরীক্ষা করে এই দুজনকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে আদালত।
পরবর্তীতে তাদের শিশু উল্লেখ করে এ মামলায় আলাদা দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচার চলছে শিশু আদালতে।
অভিযোগপত্রে এই দুজনের নাম বাদ পড়ায় বাকি ৮ আসামির বিষয়ে রায় দেয় আদালত। ২০১৭ সালের ৩১ মে এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ আসে।
পরে মামলাটি ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ মে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বদলি হয় এ মামলা।
আসামিদের মধ্যে আরমান, রুবেল ও কবির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটিতে ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
মামলার নথি অনুযায়ী, হোসাইনী দালানে হামলায় জেএমবির ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের সময় তিনজন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।
অভিযোগে বলা হয়, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত আবদুল্লাহ বাকি ওরফে নোমান ছিলেন হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। হামলার আগে ১০ অক্টোবর তারা বৈঠক করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।
বোমা হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন জাহিদ হাসান, আরমান ও কবির হোসেন। কবির ও জাহিদ ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
হামলার পর আশ্রয় নিতে কামরাঙ্গীর চরে বাসা ভাড়া করেন আরমান ও রুবেল ইসলাম। আরমান ঘটনাস্থলে পর পর পাঁচটি বোমা নিক্ষেপ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
বাকি পাঁচজন- চানমিয়া, ওমর ফারুক, আহসান উল্লাহ, শাহজালাল ও আবুসাঈদ হামলার চিত্র ভিডিও করা ছাড়াও হামলায় উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
আসামি মাসুদ রানারও হামলায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে আগের দিন গাবতলীতে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে পুলিশের একজন এএসআইকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হন মাসুদ রানা।
ইবাংলা/ জেএন/ ১৫ মার্চ, ২০২২