টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেন কর্তৃক কলেজছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগটি এখন সারাদেশে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বলছেন অনেকে।
এদিকে, ইউএনও প্রভাবশালী হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে ওই কলেজছাত্রীর পরিবারে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। অভিযুক্ত মনজুর হোসেন বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদনের পাশাপাশি মনজুর হোসেনেকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী ছাত্রী। আবেদনের পর এ ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী বলেন, ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কায় অবশ্যই আছি, যেহেতু তিনি ইউএনও আর আমি একজন ছাত্রী। যিনি তদন্ত করছেন তিনিও একজন বিসিএস ক্যাডার আর যার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তিনিও বিসিএস ক্যাডার। এত ডকুমেন্ট দেয়ার পরেও কলেজছাত্রী হিসেবে আসলে সেখানে আমার কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটাই বড় কথা। তিনি ইউএনও হিসেবে ফ্যাসালিটি পাবেন বা পাচ্ছেন কিন্তু আমি কতটুকু পাবো সেটাই বিষয়।
মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিভাস সরকার নুপুর বলেন, লোকমুখে জানতে পারলাম, গাড়ি বাজারের কাছে রেখে ইউএনও নিয়মিত ওই বাড়িতে যেতেন। আর সেখানে এক ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টা কাটাতেন। আমি নিজে কখনও দেখিনি, শুনেছি। যেকোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তার বিচার হওয়াটাই স্বাভাবিক, এটা সবাই চাবে। কেউ অপরাধ করলে সে শাস্তি পাক এটাই আমরা চাই।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সংস্থাটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। প্রশাসনের একজন কর্তা ব্যক্তি ধারা এই ধরণের ঘটনা গোটা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের শামিল। অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উৎঘাটন এবং যাতে ভিকটিম ন্যায় বিচার পায় সে পথ প্রশস্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এর আগেও তার (ইউএনও) অনৈতিক সম্পর্কের খবর জেনে তাকে মাঠ প্রশাসন থেকে সরানোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে তাকে বাসাইল থেকে ঢাকায় নেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী ও তার লিখিত অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে ইউএনও’র পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ইউএনও ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইলস্থ সরকারি বাসভবনে নিয়ে যায়। সেখানে বিয়ের আশ্বাসে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর ওই ছাত্রী ও মনজুর হোসেন টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজের পাশে পাওয়ার হাউজের পেছনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করে। সেখানে তারা দুই মাস থাকার পর বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে চাপ দেন ভুক্তভোগী। তখন ইউএনও জানায়, ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে বিয়ে করবে। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মনজুর হোসেনের পরিচিত জোবায়েত হোসেন ও সরকারি গাড়ির চালক বুলবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ভিসায় ভারত যান।
ওই বছরের ৫ অক্টোবর তারা ভারত থেকে দেশে ফিরেন। ভারতে অবস্থানকালে তারা অধিকাংশ সময় নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছে। ভারতের হায়দ্রাবাদে হাসপাতালের কাছে একটি বাসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করে তারা দুই জনেই চিকিৎসা নেয়। পরে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে তারা আবার দেখা করে এবং মনজুর হোসেন পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বিয়ে না করায় পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ভুক্তভোগী। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ছাত্রীকে আইনি সেবা দিচ্ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
ইবাংলা / জেএন /১০ এপ্রিল,২০২২