পরিবেশ রক্ষা করে কারখানা নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিটি শিল্প কারখানা ও অন্যান্য সকল স্থাপনা নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা প্রতিটি শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে নির্মাণাধীন অন্যান্য সকল স্থাপনা, সবকিছু পরিবেশ-বান্ধব করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও অন্যান্য চার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশ-বান্ধব (গ্রীন) ১০টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে ৭টিই বাংলাদেশে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, তাঁর সরকার প্রতিটি ধাপে পরিবেশ বিবেচনায় পদক্ষেপ নিচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছে এবং দেশে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে, তখনই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি ১০ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) ও নরসিংদীর সার প্রকল্পস্থান থেকে এ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী একই সময়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের ১৪ তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়সহ আরো চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে মাদারীপুর বিএসসিআইসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট সম্প্রসারণ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টার (বিআইটিএসি) এর আওতায় টুলস ইনস্টিটিউশন স্থাপন এবং বাংলাদেশ স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ালিং কর্পোরেশন (বিএসইসি)’র আওতায় এলইডি লাইট অ্যাসেম্বিং প্লান্ট স্থাপন।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি’র সভাপতিত্বে ঘোড়াশাল থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্টিজ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শাহ মো. ইমদাদুল হক। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বিআইসিসি থেকে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে এই প্রকল্পগুলোর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে, শিল্পমন্ত্রণালয় প্রকাশিত শিল্পায়নের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার ওপর একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অভ্যন্তরীন বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি খাদ্য পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ‘প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা খাদ্যের মান বৃদ্ধি করতে পারলে, আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়েও তা বিদেশে রপ্তানী করতে পারব। এখন দেশের মানুষের ক্রমক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কৃষি পণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ লক্ষ্য দেয়ায় বাংলাদেশ কৃষি পণ্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। নিয়মিত গবেষণার ফলে বাংলাদেশে শস্য, ফল, শাক-সবজি, ডিম, মাছ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা (খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প উন্নয়নে) নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’

সরকার প্রধান বলেন, দেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তারা যথাযথ মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ চূড়ান্ত হয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩৩টি প্রকল্পের বিপরীতে ৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ইউরিয়া প্রকল্পের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকার ২০১৪ সালে পুরনো ঘোড়াশাল ও পলাশ উইরিয়া সার কারখানার স্থানেই উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন, স্টেট-অব-দ্য-আর্ট, জ্বালানী-সাশ্রয়ী ও পরিবেশ-বান্ধব নতুন ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

নতুন কারখানাটি দিনে প্রায় ২ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে পারবে। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে ইউরিয়া উৎপাদন ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী এই সার প্রকল্পে ঋণ সহায়তা প্রদান করায় জাপান ও চীন সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শিল্প প্রযুক্তি সহয়তা কেন্দ্র (বিআইটিএসি) দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি ও গবেষণার মাধ্যমে আমদানীকৃত বিকল্প যন্ত্রাংশ নির্মাণ করে, দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিআইটিএসি’র টুল অ্যান্ড টেকনোলোজি ইনস্টিটিউট (টিটিআই) দেশের হালকা প্রকৌশল খাতের জন্য দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থানীয় প্রকৌশল সহায়তা দিতে ও হালকা প্রকৌশল খাতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টুল ইনস্টিটিউট অব বিআইটিএসি দেশীয় প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন যন্ত্র ও শিল্প প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সহায়তা করবে। আর এটা বিদেশ থেকে যন্ত্র আমদানি হ্রাস করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (বিএসইসি) বর্তমানে আধুনিক ও মানসম্পন্ন টিউব লাইট, সিএফএফ বালব ও এলইডি টিউব লাইট প্রস্তুত ও বিপণন করছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএসইসি’র আওতায় ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেডের উদ্ভাবনায় এলইডি লাইট অ্যাসেম্বিং প্লান্ট স্থাপনের পর এর পণ্যগুলো জ্বালানী সাশ্রয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

ইবাংলা/ টিএইচকে/ ২১ এপ্রিল, ২০২২

Contact Us