শেখ হাসিনার নৌ-বহরে হামলাকারি শিবির নেতাই নৌকার কান্ডারী!

গোলাম কিবরিয়া বরগুনা :

প্রধানমন্ত্রী ও আ.লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নৌবহরে লাঙ্গল ছুড়ে মারা সাবেক শিবির নেতা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনে নৌকার কান্ডারী। প্রাক ভোটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ আবু জাফর খোকন হাওলাদারকে হারিয়ে দলীয় মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছেন তিনি। শিবির নেতার এমন চমকে হতাশ তৃণমুল নেতাকর্মীরা।

মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক মোঃ শামীম পাটোয়ারীর অভিযোগ টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে বিজয়ী হয়েছেন শিবির নেতা। দলীয় শৃংখলা রক্ষায় দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে জেলা ও কেন্দ্রিয় নেতাদের কাছে দাবী জানিয়েছেন তিনি।

জানাগেছে, তালতলী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চন আগামী ১৫ জুন। ওই নিবার্চনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নে তৃণমুল নেতাদের নিয়ে তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ গত শনিবার দলীয় কার্যালয়ে প্রাক ভোটের আয়োজন করেন।

পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ আবু জাফর খোকন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বাবুল পাটোয়ারী, সাবেক শিবির নেতা বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল রাজ্জাক হাওলাদার, উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক মোঃ শামীম পাটোয়ারী ও প্রায়াত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন কালু পাটোয়ারীর ছেলে শাহীন পাটোয়ারী দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম সংগ্রহ করেন।

উপজেলা নেতৃবৃন্দের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশী মোঃ শামীম পাটোয়ারী ও শাহীন পাটোয়ারী ও রেজাউল করিম বাবুল পাটোয়ারী দলীয় শৃংখলা রক্ষার্থে প্রাক ভোট বর্জন করে শিবির নেতার নাম বাদ দিয়ে কেন্দ্রে চারজনের নাম পাঠানোর প্রস্তাব করেন। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ রেজবি-উল করিব জোমাদ্দারসহ বেশ কয়েকজন নেতা তাদের প্রস্তাব উপেক্ষা করে প্রাক ভোট দেন।

ওই ভোটে সাবেক শিবির নেতা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ৩৮ এবং আওয়ামীলীগ নেতা আবু জাফর খোকন ৩৭ ভোট পান। শিবির নেতার কাছে আওয়ামী লীগ নেতা হেরে যান। অভিযোগ রয়েছে টাকার বিনিময়ে শিবির নেতা ভোট কিনে বিজয়ী হয়েছেন।

প্রায়াত কাসেম হাওলাদারের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ছাত্রজীবন থেকে ছাত্র শিবির রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি ঢাকা তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় লেখাপড়া অবস্থায় সুত্রাপুর থানার ছাত্রশিবির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৬ সালে শিবিরের রাজনীতি ছেড়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে যুক্ত হন।এরপর রাজ্জাকের স্ত্রীর আপন বড়ভাই জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হওয়ার সুবাদে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাইটাল পদও। হয়েছেন অঢেল সম্পত্তির মালিক। এরপর ২০১৭ সালে তিনি পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন নির্বাচনে অংশ নিতে একবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন! অনুপ্রবেশকারী হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে মনোনয়ন দেয়নি। পরে ২০১৮ সালের অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।

পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন আহম্মেদ, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি কাইয়ুম তালুকদার ও ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি কুদ্দুস তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নিবার্চনে (আমতলী-তালতলী) আসন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নেয়।

ওই নিবার্চনী প্রচারকালে ছোটবগী বাজার এলাকার পায়রা নদীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌবহর নোঙ্গর করেন। ওই সময় শিবির নেতা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে তার ঘনিষ্ঠ সহচররা প্রধানমন্ত্রীর স্পীড বোটে লাঙ্গল ছুড়ে মারেন। অল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রক্ষা পায়। প্রধানমন্ত্রীর নৌবহরে লাঙ্গল ছুড়ে মারা শিবির নেতা এখন পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনে নৌকার কান্ডারী। দল মনোনয়ন দিলে একজন শিবির নেতাকে ভোট দিতে হবে। দ্রুত শিবির নেতার নাম মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ দিয়ে জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রিয় কমিটিতে পাঠানোর দাবী জানান তারা।

তালতলী উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক মোঃ শামীম পাটোয়ারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নৌবহরে লাঙ্গল ছুড়ে মারা ব্যক্তি আব্দুর রাজ্জাক এখন আওয়ামীলীগ নেতা। আমরা যারা প্রকৃত আওয়ামীলীগ করে আসছি তারা হাইব্রীড আওয়ামীলীগের কাছে অসহায়। অনু প্রবেশকারী আব্দুর রাজ্জাকের নাম মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রে পাঠাতে জেলার নেতৃবৃন্দের কাছে দাবী জানান তিনি।

আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমার যখন কোন বিজয় আসে তখনই আমার প্রতিপক্ষরা আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানা অপপ্রচার চালায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌবহরে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনার কোন সত্যতা নেই।

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নিবার্চনে আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌবহরে লাঙ্গল ছুড়ে মারেন। এরপর আওয়ামীলীগ ক্ষমতার আসার পরে তিনি ফাঁক ফোকর দিয়ে আওয়ামীলীগ রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তার নাম অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় রয়েছে।

ইবাংলা/জেএন/১১ মে, ২০২২

Contact Us