নড়াইল সেটেলমেন্ট অফিসের দালাল হিসেবে ব্যাপক পরিচিত মোহাম্মদ শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সর্বত্র চাউর হয়েছে। সেই সাথে তার কুকর্মের সব কথা ফাঁস হয়ে গেছে। মোহাম্মদ নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ১০ হাজার টাকা বেতনের অস্থায়ী পিওন।
তার এই পরিচয় খুব কম মানুষে জানে। তবে সে সেটেলমেন্ট অফিসের দালাল এটা তার পরিচিত সকলেই জানে। পিওন পদে চাকরী করলেও সেটেলমেন্ট অফিসের দালালিই তার মূল পেশা। এক সময়ে পেটে ভাতে বাসা বাড়িতে কাজ করা মোহাম্মদ চলনে বলনে পুরাটাই সাহেব। ইতোমধ্যে মোহাম্মদ উল্লাহ সাহেব নামে নিজেকে পরিচয় দিতে শুরু করেছেন।
নড়াইল শহরের ভওয়াখালীতে ১০ শতক জমির উপর তিনতলা আলিশান বাড়ী করেছেন। প্রতিটি কক্ষ বিলাসবহুল ডেকোরেশন করেছেন। শহরের রূপগঞ্জ বাজারসহ পৌরসভার বিভিন্ন মৌজায় নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। মোহাম্মদ উল্লাহর হাল রেকর্ডে (আরএস) কুড়িগ্রাম মৌজার মেইন সড়কের পাশে,রূপগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরকারি খাস খতিয়ানের প্রায় ২ একর জমি নিজ নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন।
ব্যক্তি মালিকানা জমিও রেকর্ড করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরূদ্ধে। সিনেমা’র নায়ক স্টাইলে জীবন যাপন করেন। চলাফেরা করেন সমাজের অভিজাত শ্রেণিতে। চিহ্নিত দালাল মোহাম্মদ উল্লাহ নড়াইল সেটেলমেন্ট অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, শহরের সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী ভূমি দস্যুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির বিশাল সিন্ডিকেট।
নড়াইল সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম মৌজার হাল(আর এস) রেকর্ডে ৪৬৫ ও ১৫৫ নং খতিয়ানে সাবেক (এস এ) ২৪৮, ২৪৯ ও ২৪৭ নং দাগসহ আরো অন্তত ১৭টি দাগে ৩ একরের বেশী সরকারি ও ব্যক্তি নামীয় জমি ভওয়াখালী গ্রামের মোহাম্মদ ও কুড়িগ্রামের সন্তোষ কুমার আচার্য্য এর কন্যা যুথিকা রাণী মজুমদারসহ ভূমি দস্যূদের নামে রেকর্ড হয়েছে।
কিন্তু নড়াইল পৌর ভুমি অফিস সূত্রে জানা যায় কুড়িগ্রাম মৌজায় এসএ ২৪৭ ও ২৪৮, ২৪৯ দাগের ৩৩ শতক জমি সরকারি ”ক” তপশিলভুক্ত এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের নামে রেকর্ড রয়েছে। শুধু তাই নয় নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ’র অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমানের জমি মোহাম্মদ উল্লাহর নামে রেকর্ড হয়ে এসেছে।
নড়াইল পৌর ভুমি অফিসের তহশিলদার (উপ-সহকারি ভুমি কমিশনার) মোস্তাফিজুর রহমান মিলন বলেন, সরকারি জমির হাল (আর এস) পর্চাসহ অনান্য তথ্যের জন্য সেটেলমেন্ট অফিসে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। ফাইনাল প্রিন্ট পর্চা পেলে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা যাবে এ চক্র কি পরিমান জমি জালিয়াতি করে রেকর্ড করে নিয়েছে। তাদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১০ হাজার ১শ ৬১ টাকা বেতনে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে অফিস সহায়কের কাজ করেন মোহাম্মদ। কলেজের একাধিক স্টাফ জানান, অধ্যক্ষের সাথে মোহাম্মদ’র সুসম্পর্ক থাকায় তার কলেজে যেতে হয় না।
শহরের প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের জোরেই অস্থায়ী পিওনের চাকুরী পান এবং তাদের ইশারায় অধ্যক্ষের ঘন্ষ্টিজন হয়েছেন। কলেজে অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত কাজ আর মাসিক বেতন নেয়া ছাড়া মোহাম্মদ কলেজে যান না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ’র বাড়ী সদর উপজেলার আউড়িয়া গ্রামে। তার বাবা ইউসূফ মোল্যা নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পিওনের চাকুরী করতেন। সেই সুবাদে ছেলে মোহাম্মদ ও মফিজকে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে চাকুরী দেন। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম জানান ইতোমধ্যে তাকে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে।
বর্তমানে নিয়মিত কলেজ করছে। নড়াইল সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ রুহুল কুদ্দুস বলেন, সরকারি খাস খতিয়ানের জমি রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। সরকারি জমি আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই।
নড়াইল সহকারি সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সেলিম হাসান বলেন, তিনি নতুন এসেেছন। রেকর্ড কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে তিনি ছিলেন না। ক্ষতিগ্রস্থরা গেলে তাদের জমি রক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা দিবেন বলেও জানান।
সেটেলমেন্ট’র দালাল মোহাম্মদ’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জালিয়াতির কথা স্বিকার করে বলেন, কুড়িগ্রামের অয়ন রঞ্জন দাস,নড়াইল পৌরসভার সাবেক নায়েব ইলিয়াস চৌধুরী সহ অনেকেই এভাবে জমি জালিয়াতি করে নিয়েছে।
জমিদারদের বিপুল পরিমান জমি জালিয়াতি হয়েছে। সে সব জমি উদ্ধারে কারো কোন তৎপরতা নেই। অথচ সামান্য জমি নিয়ে সবাই বাড়াবাড়ি করছে। বেশি ঝামেলা হলে জমি ছেড়ে দিবনে বলে জানান।
ইবাংলা/টিএইচকে/৩জুন,২০২২