স্বপ্ন ছুঁয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন আজ। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে উদ্বোধন হলো পদ্মা সেতু। আজকের এই দিনটিকে বাঙালি জাতি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে স্মরণে রাখবে।
শনিবার (২৫ জুন) দুপুর ১২টায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি। এরপর প্রথম টোল দিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার গাড়িবহর। এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় টোল দিয়ে সেতুতে ওঠার পর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধন খাম ও সিলমোহর প্রকাশ করেন। শনিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশ থেকে তিনি এগুলো প্রকাশ করেন।
এর আগে, পদ্মার মাওয়া প্রান্তে শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টায় পৌঁছেছেন শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীরা। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যাবেন। জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক এবং ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন।
কাল রোববার (২৬ জুন) ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীতে যাবেন। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন। জনসভায় যোগদান শেষে জাজিরা প্রান্তের সার্ভিস এরিয়া-২-তে যাবেন। সেখান থেকে তিনি হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরে আসবেন।
তথ্যমতে, বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নাম পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা মুন্সীগঞ্জ আর শরিয়তপুরকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর ডাঙার অংশ যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। স্টিল আর কংক্রিটের তৈরি দ্বিতল সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক আর নিচে একক রেল পথ।
উদ্বোধনের দিন থেকেই সেতুতে দৈনিক ১২ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করতে পারবে। বিশ্বের খড়স্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। তাই সেতুকে টেকসই করতে নির্মাণের সময় বিশেষ প্রযুক্তির পাশাপাশি উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়।
পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২ আর স্প্যান ৪১টি। খুটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়। অর্থাৎ প্রায় ৪০ তলা ভবনের উচ্চতার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীর পাইলিং হয়নি।
পদ্মা সেতুর পাথর ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে আমদানি করা, যার একেকটির ওজন একটন। সেতুকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে ফিকশন পেন্ডুলাম বেয়ারিং লাগানো হয়েছে; যা রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকতে পারবে।
বিশ্বে কোন সেতুতে এত শক্তিশালী বেয়ারিং লাগানো হয়নি। সেতুর পাইলিং ও খুঁটির অংশে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা অতিমিহি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। নদী শাসনে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়, এ কাজে বিশ্বে এতো বড় দরপত্র আর হয়নি।
পদ্মা সেতুতে রয়েছে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা। সাধারণ আলোক সুবিধার পাশাপাশি সেতুতে রয়েছে আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনে রয়েছে আর্কিটেকচার লাইটিং। স্বাভাবিক সময়ে নদীর পানি থেকে সেতুর উচ্চতা প্রায় সাত ফুট। এর নিচ দিয়ে পাঁচ তলা উচ্চাতার নৌযান চলাচল করতে পারবে।
৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরের সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপন করবে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার উন্নয়নের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইবাংলা/টিএইচকে/২৫জুন,২০২২