নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারীদের হামলায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা মো.হাসিবুল বাশারের (২৫) লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মিরা। বৃহস্পতিবার ( ৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার চৌরাস্তায় এলাকায় উপজেলা ছাত্রলীগ ব্যানারে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মো.হাসিবুল বাশারের লাশ উপজেলার চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মি, নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মির অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিলটি চৌমুহনী জালাল উদ্দিন কলেজ থেকে শুরু করে বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা চত্তরে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা নিহত হাসিবুল বাশারের হত্যাকারী এবং তাদের মদদ দাতাদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানায়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম রাতুল,সাধারণ সম্পাদক রাহাত চৌধুরী, চৌমুহনী পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাকসুদুর রহমান,সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন সাইফুল।পরে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত থাকার পরামর্শ ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে বক্তব্য রাখেন বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি। ওসি বলেন, ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বপরিকল্পিত ভাবে পূর্ব শক্রতার জের ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ২নং গোপালপুর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের কোটরা মহব্বতপুর গ্রামের সুবাহান মার্কেট এলাকায় বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মো.হাসিবুল বাশারকে (২৫) কুপিয়ে জবাই করে হত্যা করে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী হাসান,মাসুম ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা।
নিহত হাসিবুল বাশার উপজেলার ২নং গোপালপুর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের কোটরা মহব্বতপুর গ্রামের ইউনুস মৌলভীর বাড়ির মৃত আবুল বাশারের ছেলে।এ সময় তাদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল বাশারের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহাত চৌধুরী জানান, পূর্ব শক্রতার জের ধরে উপজেরার ২ নং গোপালপুর ইউনিয়নের কোটরা মহব্বতপুর গ্রামের বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হাসান,মাদক ব্যবসায়ী মাসুমও তাদের অস্ত্রধারী সাঙ্গপাঙ্গরা বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোপালপুর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের সুবাহান মার্কেট এলাকায় হাসিবুলের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা হাসিবুলকে ছুরি দিয়ে মাথায় ও গলায় জবাই করে গুরুত্বর আহত করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
রাহাত চৌধুরী অভিযোগ করে আরো বলেন, কয়েক বছর আগে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ মিয়ার হাত ধরে ২ নং গোপালপুর ইউনিয়নের সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বিএনপি থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন। এরপর সালাউদ্দিনের হাত ধরে হাসান বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। হাসানের অপর সহযোগী মাসুম এলাকার চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
কিছু দিন আগে হাসান ও মাসুম তাদের অনুসারীদের নিয়ে আরেক ছেলের পায়ের রগ কেটে দেয়। ওই ঘটনায় বেগমগঞ্জ থানায় মামলা হলেও পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারে নি। ওই ঘটনায় পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না। হাসান ও মাসুমের প্রধান ক্ষমতার উৎস আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী সালাউদ্দিন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক একজনকে আটক করেছে। অভিযুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
ইবাংলা/জেএন/৭ জুলাই,২০২২