দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন,‘এই তো শুরু, সরকার চোখে শর্ষের ফুল দেখবে, দেখতে হবে’। ফখরুল বলেন, ‘আমি না, অর্থনীতিবিদেরা বলছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। জনগণ ফুঁসে উঠছে, ফুঁসে উঠবে এবং সমস্যাই তাদের পতন ত্বরান্বিত করবে।’
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য সরকারের দুর্নীতি দায়ী- এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এ সমস্যা যে সৃষ্টি হবে, তা আমরা বহু আগেই বলছি।’
আরও পড়ুন…সকল পর্যায়ে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরো বলেন, প্রথমত সঠিক পথে সরকারের পরিকল্পনা নেই। দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। একটা জায়গা না, সব জায়গাতেই তাদের লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা। এই দুর্নীতি পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছে। একইভাবে শ্রীলঙ্কায় যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’
দুর্নীতি, ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং- বাংলাদেশ কী শ্রীলঙ্কা পথেই যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সবে তো শুরু। এটা আজকের ব্যাপার না, অর্থনীতির ইতিহাস। একটা সংকটে ভবিষ্যতে কী হবে, সে বিষয়গুলো বুঝে আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
দুর্ভাগ্য আমাদের, আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী এতই পাওয়ারফুল যে তাঁরা করোনাকেও নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন, অর্থনীতির সমস্যাগুলোও সব সমাধান করে ফেলেছেন। তাঁরা পারেন না এমন কোনো কাজ নেই এবং সেই বিশ্বাসে তাঁরা যা খুশি, তা- ই করে গেছেন। এখন তো শুরু হয়ে গেছে আসল খেলা। আসল সমস্যার শুরু হয়ে গেছে এবং সমস্যাই তাদের পতন ত্বরান্বিত করবে।’
বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রসঙ্গে অতীতে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিএনপি সরকারের প্রচণ্ড সমালোচনার কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সবচেয়ে বড়াই করে বলেছিল তারা বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করবে।
এটি করতে গিয়ে তারা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট ক্রয় করেছিলেন বিনা টেন্ডারে এবং একটা ‘অসম্ভব’ চুক্তির মাধ্যমে। এমনকি তারা বিষয়টিতে ইনডেমনিটি দিয়েছে যে, এ বিষয়ে কাউকে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।
আরও পড়ুন…খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জাতিসংঘের
‘অসম্ভব’ চুক্তির কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ডিজেলচালিত কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে সরকারকে জ্বালানি সরবরাহ করতে হবে। উৎপাদন থাকুক বা না থাকুক, সরকার তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিক আর না নিক, তাদের টাকা দিতেই হবে। যার ফলে আজ দেখা যাচ্ছে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই তাদের ৭৮ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে।
বর্তমান লোডশেডিংয়ের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখন যে ডিজেলচালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ থাকবে, বন্ধ থাকলেও এরা পয়সা পাবে। পত্রিকায় দেখলাম বছরে ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা তাদের জন্য গুনতে হবে। এতে কী প্রমাণিত হয়। শুধু দুর্নীতি করার জন্য, তারা (সরকার) উপকৃত হয়েছে এমন বিশেষ কোম্পানিকে অর্থ বানানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এটি করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা শুধু বিদ্যুতের ক্ষেত্রে নয়, মেগা প্রজেক্টসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা জনগণের পকেট থেকে এভাবে টাকা কেটে নিয়েছে। যার ফলে আজকে যে আর্থিক–সংকট তৈরি হচ্ছে, এই সংকটের প্রধানতম কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। এর মূল্য দিতে হচ্ছে জনগণকে। এই দুর্নীতির কারণে আমরা অবিলম্বে সরকার পদত্যাগ দাবি করছি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) সব মনে হয় আহাম্মক। ১০ বছর ধরে প্রমাণিত হচ্ছে যে দলীয় সরকারের অধীনে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
এ কথা শামসুল হুদা সাহেবও বলেছেন, বেচারা হুদা (কে এম নূরুল হুদা) সাহেব- তিনিও চাকরি যাওয়ার পরে এ কথা বলেছেন। আর ইনি (কাজী হাবিবুল আউয়াল) তো এখনই বলে দিচ্ছেন যে এটা সম্ভব নয়। কালকে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে বিএনপি নির্বাচনে না এলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রশ্নটা তাহলে নির্বাচন কমিশনের কাছে না। এটা হচ্ছে সরকারের কাছে- যারা পরিকল্পিতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছে এবং যারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাদের আবার সে জায়গা প্রত্যর্পণ করতে হবে, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া তো উত্তরণের কোনো পথ নেই।
আরও পড়ুন…ডা. সাবরিনা-আরিফসহ ৮ জনের ১১ বছর কারাদণ্ড
সোমবার (১৯ জুলাই) দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সভায় সম্প্রতি নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবকের ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে, এই ঘটনা সরকারবিরোধী জনরোষকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার অপতৎপরতা।
সরকারের উদ্দেশ্যমূলক নিষ্ক্রিয়তাই এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণ। এ ঘটনায় সরেজমিন তদন্তের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটি ২৬ জুলাই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
সভায় ১৬ জুলাই সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশে সমরাস্ত্র নিয়ে আসার সময় ইউক্রেনে কার্গো বিমান বিধ্বস্তের উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থায়ী কমিটি। তবে কমিটি এ ঘটনায় আইএসপিআরে দুই রকম বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানায়। এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসা আবারও পানির দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ৫৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
ইবাংলা/টিএইচকে/১৯জুলাই,২০২২