গত ২১ জুলাই রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের (২৫) মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- রাশেদুল ইসলাম (১৭) ও রিপন ওরফে আকাশ (২৪)। মোবাইলটি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন গ্রেফতার হওয়া দুই ছিনতাইকারী। ওই টাকার মধ্যে তারা উভয়ে ১ হাজার টাকা করে নিয়ে বাকি দুই হাজার টাকায় মদ কিনে পান করে ছিলেন।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এসব তথ্য জানিয়েছেন তারা। বুধবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও থানা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রুবাইয়াত জামান।
গত ২১ জুলাই রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে পারিশা আকতারের মোবাইলটি বাস থেকে ছিনিয়ে নেয় রিপন ওরফে আকাশ। তাকে ধাওয়া করলে সে (ছিনতাইকারী) মোবাইলটি আরেক জনের কাছে হাতবদল করে পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন…উন্মুক্ত পাঠাগার খোলার দাবিতে ভিসি ভবন ঘেরাও
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ওই ছিনতাইকারী ও মোবাইল ফোনটি উদ্ধারে তৎপর হয় পুলিশ। তদন্তে ঘটনায়স্থল ও আশপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সহযোগীকে শনাক্ত করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্য মতে কারওয়ান বাজারের একটি দোকানে বিক্রি করে দেওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন কেনার অপরাধ মো. শফিক নামে ওই দোকান মালিকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানার পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুবাইয়াত জামান বলেন, ছিনতাইকৃত মোবাইলটি ব্যবহার করা হয়নি। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করা হয়। ফুটেজে দেখা যায়, আকাশ মোবাইলটি ছিনিয়ে দৌড় দেয় কিন্তু তার পিছু পিছু অন্য এক যুবক দ্রুত হাঁটতে শুরু করে।
তিনি বলেন, ওই যুবককের সন্দেহজনক গতিবিধির জের ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং তাকে ২৪ জুলাই কারওয়ান বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে জানায় তার নাম রাশেদুল ইসলাম (১৭)। গ্রেফতার রাশেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে স্বীকার করে যে, তারা দু’জন মিলে এই ছিনতাইয়ের কাজটি করেছে।
তিনি বলেন, এদিকে রাশেদের তথ্য অনুযায়ী ছিনতাইকারী রিপনকে গ্রেফতার অভিযান চলছিল। কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে খবর পাওয়া যায় রিপন অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। পরে আদালতে আবেদন করে তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ছিনতাইয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে রিপন।
পরে রিপন ও রাশেদুলকে মুখোমুখি করলে পুরো ঘটনাই স্বীকার করে রিপন ওরফে আকাশ।পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, রিপনের দেওয়া তথ্যমতে কারওয়ান বাজার থেকে শফিক নামে একজনের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ তারা জানায়, ছিনতাইয়ের পর মোবাইল ফোনটি তারা ৪ হাজার টাকায় কারওয়ান বাজারে দোকানি শফিকের কাছে বিক্রি করেছেন। ওই টাকা থেকে রিপন ওরফে আকাশ নেয় ১ হাজার টাকা, আর রাশেদ নেয় ১ হাজার টাকা। বাকি ২ হাজার টাকায় তারা মদ কিনে পান করে।
এডিসি রুবাইয়াত বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনার মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই তদন্ত শেষ করে তিনজনকে অভিযুক্ত করে বুধবার (৩ আগস্ট) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, শুধু ভাইরাল কিংবা গণমাধ্যমে আসলে যে আমরা কাজ করি তা নয়। গত মাসে (জুলাই’২০২২) তেজগাঁও থানা পুলিশ প্রায় ৪০টি চুরি/ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।
ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার ও ছিনতাইকারী গ্রেফতারের বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পারিশা আক্তার বলেন, আসামি গ্রেফতার হয়েছে এতেই আমি অনেক খুশি। পুলিশ প্রতিনিয়ত আমাকে আপডেট জানিয়েছে।
আরও পড়ুন…অপহৃত স্কুল ছাত্রীর সন্ধান মিলেনি ২৮ দিনেও
এখন আমার চাওয়া যে, গ্রেফতার হওয়া এই ছিনতাইকারী যাতে আবার ছাড়া পেয়ে না যায়। তার যাতে কঠিন শাস্তি হয় এবং সে বের হয়ে যাতে আবার ছিনতাই কাজে জড়াতে না পারে, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
এই ছিনতাইকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আমার যেখানে যাওয়া প্রয়োজন, আমি সেখানেই যাব।
তিনি বলেন, যখন আমার মোবাইল ফোনটি ছিনতাই হয়, তখন আমি শুধু বুঝেছি যে আমার ওই ফোনটি পেতেই হবে। কারণ ওই ফোনের মধ্যে আমার গত ১ বছরের থিসিসের সব ডাটা/তথ্য ছিল।
তাই ঘটনার পর ঝুঁকি নিয়ে হলেও আমি ওই মোবাইলটি পাওয়ার জন্য ও ছিনতাইকারীকে খুঁজে বের করতে অপেক্ষা করছিলাম। মোবাইল ফোনটি না পেয়ে পুনরায় কাজ করে গত ২৮ জুলাই থিসিস পেপার জমা দিয়েছি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.