ধর্মঘটের কারনে খাদ্যসংকটে চা শ্রমিকরা…
চা শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করছেন। শনিবার ২০ আগস্ট ও চলছে অষ্টম দিনের ধর্মঘট। ধর্মঘটের কারণে কাজে না যাওয়ায় রোববার ২১ আগস্ট সাপ্তাহিক হাজিরা বেতন ও রেশন পাবেন না তাঁরা। ফলে দিন আনা দিন খাওয়া অভাবী শ্রমিকদের অনেকেরই হাঁড়িতে দেখা দেবে চাউলের সংকট।
চা শ্রমিকেরা বলছেন, কর্মবিরতির অষ্টম দিনে এসে তাদের অনেকেরই ঘরে চাউল নেই। তাঁরা পরিবারের ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে উপোস করার ভয়ে আছেন। এদিকে আন্দোলন ছেড়ে কাজে ফিরে গেলে যে মজুরি পাবেন তা দিয়েও খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার মতো উপায় নেই। এখন পেটে খিল দিয়ে বসে দাবি আদায় করে নেওয়াকেই নিয়তি মনে করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
১৩ আগস্ট শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট শুরু করেন শ্রমিকেরা। এর আগে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চারদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। সে সময় মৌলভীবাজারের ৯২টিসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানের প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করেন।
দাবি আদায় না হওয়ায় তাঁরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন। লাগাতার কর্মবিরতির সঙ্গে রাজপথ ও সড়কপথে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু হয়। ইতোমধ্যে ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে মজুরি ১৪০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেন চা বাগান মালিকরা। তবে শ্রমিকেরা তাদের দাবিতে অনড় থেকে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন…সিরিয়ায় ফের রকেট হামলায় শিশুসহ নিহত বেড়ে ২০
চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ১৭০ বছর ধরে আমাদের ঘাম ঝরানো শ্রমে মালিকরা শত শত কোটি টাকা করছেন। কিন্তু মালিকরা তাদের অতি মুনাফার চিন্তায় বিভিন্ন কলাকৌশলে আমাদের মজুরি আজও ১২০ টাকা করে রেখেছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা রাম ভজন কৈরী বলেন, কর্মবিরতির পাশাপাশি আলোচনা চলছে। শ্রমিকদের ঘরে খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে। আধপেটা খেয়ে না-খেয়ে তবু কর্মবিরতি পালন করছেন তাঁরা। কারণ, এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।
আরও পড়ুন…বরগুনা নৌরুটে আগের ভাড়াতেই চলছে লঞ্চ, তবে যাত্রীরা এমকে শিপিংয়ের কাছে জিম্মি
শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক রয়েছে। সেখানে চা বাগান মালিক ও শ্রমিক নেতারা বসবেন। শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও মন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন। সেখানে মজুরির বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনায় সমঝোতা হবে বলে আশা করছি।
যাদের একেবারে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই তাদেরকে বাছাই করে খাদ্য সহায়তা দিতে একটি গোপন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলাম বলেন, মজুরি সংক্রান্ত বিষয়ে সমঝোতা-আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় কর্মবিরতি মোটেই যৌক্তিক নয়। আলোচনার পথ রুদ্ধ হলে এ ধরনের কর্মসূচিতে যেতে পারতেন। এতে বাগান মালিক, শ্রমিক ও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন…প্রবীণরা অধিক দীর্ঘায়ু হচ্ছেন তাদের সেবা জোরদার করতে হবে:সি চিন পিং
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা কার্যকর করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২০২১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে নবায়নকৃত মজুরি চালু হওয়ার কথা। কিন্তু ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও করোনা সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে নতুন মজুরি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি।
ইবাংলা/তরা/২০ আগস্ট ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.