চীন-ইউরোপ রেলপথের (সিআন-হামবুর্গ) সিআন আন্তর্জাতিক বন্দর থেকে যে-ট্রেনটি ইউরোপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, সেটি ছিল চলতি বছর চীন-ইউরোপ রেলপথের দশ হাজারতম ট্রিপ। গত বছরের তুলনায় ১০ দিন আগেই এ লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে এবার।
চীন দ্রুতগতির ট্রেন রফতানি শুরু করেছে। জাকার্তা-বানতুং হাই-স্পিড রেলওয়েতে ব্যবহারের জন্য নির্মিত প্রথম দ্রুতগতির ট্রেন ও প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রেন ছিং তাও বন্দর থেকে ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় এদিন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রেলপথ সংশ্লিষ্ট সহযোগিতামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে চীন। এগুলো স্থানীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠিতে পরিণত হয়েছে। যেমন, জার্মান পুরাতন শিল্প-ঘাটি তুইসবার্গার বন্দরকে নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলে।
আরও পড়ুন…কয়লা সরবরাহ সংকটেও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যহত
চীন-ইউরোপ রেলপথের কারণে এ বন্দর দ্রুত ইউরোপের লজিস্টিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ইয়ু সিন ও লজিস্টিক কোম্পানির জার্মান গুদাম কর্মী থমাস বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখানে কাজ শুরু করি। বর্তমানে এখানকার কাজ অনেক বেড়েছে। ছোট হালকা শিল্প থেকে বড় সরঞ্জাম পর্যন্ত সবকিছুই এখানে আছে। আমার বয়স ৫৫ বছর। আমার জন্য এমন একটি আনুষ্ঠানিক চাকরি পাওয়া জার্মানিতে সহজ নয়।’
সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে চীন-ইউরোপ রেলপথের ৮২টি লাইন আছে। এগুলোর মাধ্যমে ইউরোপের ২৪টি দেশের ২০০টি শহরে যাওয়া যায়। এসব লাইনে মালামাল পরিবহন ২০১১ সালে চালু হওয়ার পর ৯০০ গুণ বেড়েছে। মালামালের মধ্যে আছে গাড়ি, খুচরা সরঞ্জাম, ইলেক্ট্রনিক পণ্যসহ ৫০ সহস্রাধিক রকমের পণ্য, যার মূল্য ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।চীন-ইউরোপ রেলপথের কারণে ইউরোপের অনেক শহরের উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং থমাসের মতো পরিশ্রমী মানুষদের জীবনমান হয়েছে উন্নততর।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
জাকার্তা-বানতুং হাই-স্পিড রেলওয়ে’র পাশ্ববর্তী মানুষেরাও একই সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। এ রেলপথ চালু হওয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে বানতুং যাওয়ার সময় ৪০ মিনিট কমে যাবে। অনেক ইন্দোনেশীয়র মতে, এটা সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি নতুন উন্নয়নের সুযোগ এবং নতুন জীবন-মান সৃষ্টি করবে। যেমন,জাকার্তা-বানতুং হাই-স্পিড রেলওয়ে’র বরাবর অবস্থিত ওয়ালিনি অঞ্চলে রয়েছে সুন্দর দৃশ্য। তবে এতদিন পরিবহন ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় এ অঞ্চলের অর্থনীতিও ছিল খারাপ।
জাকার্তা-বানতুং হাই-স্পিড রেলওয়ে চালুর সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে গাড়ি ও মোটরগাড়ির সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এ উপলক্ষ্যে স্থানীয় বাড়িঘরের সংস্কার ও পুনর্বাসনও হচ্ছে। ভবিষ্যতে ওয়ালিনি স্টেশনকে ঘিরে একটি নতুন শহর নির্মিত হবে। এখানে পশ্চিম জাভা প্রদেশের স্বাস্থ্য, অবসর ও চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বিনোদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে। জাকার্তা-বানতুং হাই-স্পিড রেলওয়ে ইন্দোনেশিয়ার জনগণের গৌরব হবে বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিম জাভা প্রদেশের গভর্নর।
আরও পড়ুন……ইউক্রেন রাশিয়ার হামলার সমালোচনা করায় রুশ রাজনীতিবিদ আটক
বর্তমানে বিশ্ব করোনা মহামারি, ইউক্রেন সংকটসহ নানান সমস্যা মোকাবিলা করছে। এ পরিস্থিতিতেও, চীন-ইউরোপ রেলওয়ে থেকে শুরু করে জাকার্তা-বানতুং হাই-স্পিড রেলওয়ে পর্যন্ত, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে ও হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে এই উদ্যোগের সাফল্য।
এ পর্যন্ত চীনের সাথে ১৪০টিরও বেশি দেশ ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট দলিলে স্বাক্ষর করেছে। ২০২১ সালে চীন ও ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১১.৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের বেশি। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে চীনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি ইউয়ান।
বিশ্বের বৃহত্তম গণপণ্য হিসেবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ থেকে তৈরি কল্যাণ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ও প্রশংসা কুড়িয়ে চলেছে। সূত্র:সিএমজি।
ইবাংলা/জেএন/২৪ আগস্ট,২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.