জনসেবায় ‘মোজাহার হোসেন ফাউন্ডেশন’ অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজবাড়ী জেলার জৌউকুড়া অঞ্চলে ”মোজাহার হোসেন ফাউন্ডেশন” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী ও অরাজনৈতিক কল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাঁরা বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজ প্রায় দুই দশক আগ থেকে শুরু করে। সংস্থাটি ডা:বতুল রহমান তাঁর প্রিয় পিতা মোজাহের হোসেনের স্মরণে প্রতিষ্ঠা করেন।

মোজাহার হোসেন ফাউন্ডেশনে লক্ষ্য গরীব,অসহায় ও প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। চিকিৎসা সেবার মধ্যে রয়েছে দাতব্য চিকিৎসালয় যেখানে সরাসরি ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিচালনা করা হয় । যেখানে একজন অভিজ্ঞ যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তার নিয়মিত রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা করে চিকিৎসা প্রদান করে। প্রয়োজনে রোগীদের রাজবাড়ী সরকারি হাসপাতালে রেফার করার পাশাপাশি হাসপাতাল রোগীর ভর্তি করতেও সাহায্য করেন।

আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান

মোজাহার হোসেন ফাউন্ডেশন প্রতি বছর এক থেকে দুইবার বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের আয়োজন করে চক্ষু চিকিৎসা প্রদান করে থাকে। চক্ষু শিবিরে বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা ও চিকিৎসার পাশাপাশি চোখের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চোখ অপারেশন করে থাকে। ৪ থেকে ৫ দিন একাধারে ক্যাম্প চলতে থাকে। রোগীদের বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়।

চক্ষু রোগীদের চোখের বিভিন্ন অপারেশন করা হয়। ছানি অপারেশন ও ডিসিআর অপারেশনে অনেক রোগী অল্প সময়ের মধ্যে তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন।একইসাথে অত্যন্ত জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ফাউন্ডেশনটি মানুষকে শিক্ষিত করার সম্মানজনক দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ফাউন্ডেশন ‘মোজাহার হোসেন কিন্ডারগার্টেন স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেছে যেখানে প্লে গ্রুপ,নার্সারি এবং প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করা হয়।

একইসাথে মোজাহার হোসেন কিন্ডার গার্টেন স্কুলে প্রতি বছর বিভিন্ন শ্রেণীতে ছেলে মেয়ে উভয় বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারকারীকে মেধা ভিত্তিক বৃত্তি প্রদান করে থাকে।

এমনকি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনুরূপ বৃত্তি প্রদান করা হয়।শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই ও ইউনিফর্ম দেওয়া হয়। যা শিক্ষার্থীদের স্কুল ও শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করে। একটি আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

ফাউন্ডেশন প্রতি বছর নি:স্ব ও হতদরিদ্র, গরীব- দ:খী পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকে। এভাবে ৫০-৭০টি পরিবার ‘একটি ঘর, একটি উষ্ণ কম্বল’ নীতি অনুসরণ করে কম্বল পায়। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানটি ওই অঞ্চলে গরিব-দুঃখী মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন…সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে অনুমতি লাগবে না

শিশু-কিশোরদের জন্য বিনোদনের উদ্দেশ্যে গ্রামীণ শিশু-কিশোরদের বার্ষিক খেলাধুলার পাশাপাশি পিকনিকের আয়োজন করা হয়। গ্রামীণ শিশুদের খেলাধুলার ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান করে ফাউন্ডেশনটি সাংস্কৃতি ও খেলাধুলার প্রতি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণায় কাজ করে আসছে।

মোজাহার হোসেন ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
তাদের কর্মীরা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, পরিবার পরিকল্পনা, স্যানিটেশন, বৃক্ষরোপণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে কাউন্সেলিং প্রদান করে আসছে।

মোজাহার হোসেন ফাউন্ডেশন গত ১৪ ও ১৫ ই আগস্ট বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে। শিবিরে চোখের অপারেশনের রোগী বাছাই করে ১৮ ও ১৯ ই আগস্ট ১০ জন রোগীর চোখের ছানির অপারেশন করে। অপারেশনের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার ফাউন্ডেশন বহন করেছে। প্রবর্তিতে পর্যায়ক্রমে চক্ষুরোগীদের অপারেশন করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি গণমাধ্যমকে জানায়।

মেডিকেল ক্যাম্পে ডাক্তার হিসেবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা: আমজাদ হোসেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা: কামরুল হাসান ও সউদী আরবে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত মোজাহের হোসেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডা:বাতুল রহমান।

ডাক্তার ও ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মীর পাশাপাশি মেডিকেল ক্যাম্পে আরো উপস্হিত ছিলেন মোজাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডা: বতুল রহমান, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কাওসারুল ফেরদৌস, ওয়ার্ড মেম্বার ফয়সাল আহমেদ চান্দু এছাড়াও শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবক।

অপারেশনের পর রোগীদের মধ্যে এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রুগী ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজন চমৎকার অনুভূতি প্রকাশ করেছে। রোগী নুরজাহান বলেন, বাবা চোখ খুলেই তোমাদেরকে দেখতে পেলাম! সেই আগের মত ঝকঝকা পরিস্কার! আল্লাহ্ তোমাদের ভাল করবেন বলে প্রতিষ্ঠানের জন্য দোয়া- প্রার্থনা করতে থাকেন।

ইবাংলা/জেএন/২৫ আগস্ট,২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us