দেশে তেলের মূল্য হ্রাসের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের সুখবর রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই কমছে জ্বালানি তেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৯০ ডলারেরও নিচে নেমে এসেছে।

অয়েল প্রাইস ডটকম বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দুই ধরনের অপরিশোধিত তেলই এখন ১০০ ডলারের কমে বিক্রি হচ্ছে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল ব্যারেল প্রতি ৮৮ ডলার ৪৩ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।

অপরদিকে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয়েছে ৯৩ ডলার ৯৫ সেন্টে।

আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান

আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুদিন ধরে জ্বালানির দাম ধীরে ধীরে কমছে।বিশ্বব্যাপী ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অনেক দেশেরই জ্বালানিসহ আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।আর বিভিন্ন দেশের আমদানি কমায় দাম কমছে।

এর ওপর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমেছে এবং উন্নত দেশগুলোতে মন্দার আবহ শুরু হয়েছে।দীর্ঘদিন ধরে তেলের দাম বেশি থাকায় বিপাকে পড়েছিল আমদানিকারক দেশগুলো। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার অর্থনীতিতেও ব্যাপক চাপ পড়ে।

উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলোর ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ ফাঁকা হয়ে আসে তেল আমদানি করতে গিয়ে। এর প্রভাব পড়ে অন্য পণ্যের মূল্যেও। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির পারদ ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে যায়। জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ দশমিক ১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

যা ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ। যদিও তেলের দামের এতো বড় পতনেও খুশি নয় বাইডেন প্রশাসন। তারা আরও বড় পতনের আশা করছে। হোয়াইট হাউসের বৈশ্বিক জ্বালানি সুরক্ষা বিষয়কসিনিয়র উপদেষ্টা আমোস হোচস্টেইন ব্লুমবার্গকে জানান, তেলের দাম আরও কমা উচিৎ। কেননা, ওপেক ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎপাদন বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন…বগুড়ায় ভ্যান চালককে খুন

বিশ্বে জ্বালানি তেলের বৃহত্তম আমদানিকারক ও দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবহারকারী চীনের প্রকাশিত অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত ভালো না হওয়ায় এবং ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের ইস্যুকে কেন্দ্র করেই মঙ্গলবার জ্বালানি তেলের দাম কমে।

নির্দিষ্ট সময়সীমার ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে ইরান তার ‘চূড়ান্ত’ পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) লিখিত প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে ইরান জানায় যে তারা একটি সুরক্ষিত চুক্তি করার কাছাকাছি ছিল। সেখানে এ রকম একটি পয়েন্ট রয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এমন গ্যারান্টি থাকার কথা,

ভবিষ্যতে কোনো মার্কিন রাষ্ট্রপতি চুক্তিটি পরিবর্তন করতে পারবেন না।বর্তমান অপরিশোধিত তেল নিয়ে মৌলিক ইস্যু হলো, ইরানের ওপর থেকে যদি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, তাহলে প্রতিদিন বাজারে কয়েক হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বেশি আসতে পারে। ইরানও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে যে তারা কয়েক মাসের মধ্যে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে চায়।

আরও পড়ুন…নিবন্ধন পরীক্ষায় আইসিটি শিক্ষকদের আবেদনের সুযোগ দিতে নির্দেশ

চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে চীনের অর্থনীতি অপ্রত্যাশিতভাবে ধীর হয়ে যায়। এ সময় শোধনাগারের উৎপাদন দৈনিক ১২ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ব্যারেলে নেমে আসে, যা ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে সর্বনিম্ন।

মুডি’স অ্যানালিটিক্সের অর্থনীতিবিদ হেরন লিন বলেন, চীনের সরকারি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বলা যায়, তেলের রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ দামের কারণে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ এবং ভোক্তাদের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বিধিনিষেধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ তেলের সঞ্চয় বৃদ্ধি এবং ব্যবহার হ্রাস করাকে উৎসাহিত করে। এতে তেলের চাহিদা বছরের বাকি অংশে নিম্নমুখী থাকতে পারে।

রোববার আরামকোর প্রধান নির্বাহী আমিন নাসের সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি আরব সরকার অনুরোধ করলে সৌদি আরামকো অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন সর্বোচ্চ দৈনিক ১২ মিলিয়ন ব্যারেল বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

আরও পড়ুন…নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আবার নিজেরাই রাশিয়ার পণ্য কিনছে যুক্তরাষ্ট্র!

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) মুলত: সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ন্যায্য মূল্যে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি তেল সরবরাহ করে। একইসাথে জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন, বিতরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করে।

এদিকে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য হ্রাস পেলেও  বাংলাদেশ তেলের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে সরকার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস হলেও দেশীয় বাজার তেলের দাম বৃদ্ধি করে ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্যসহ সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণের আয় বৃদ্ধি না পাওয়া ও দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।

বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভিতর একটা চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।

আরও পড়ুন…বিশ্বে চীন তরমুজ উৎপাদনে শীর্ষে

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী দু-একদিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।ডিজেলের আগাম কর অব্যাহতি ও আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করে রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি তেল আমদানিতে করের ব্যাপারে আমাদের কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সেই সুবিধার কারণে আমরা হয়তো চিন্তা করছি যে, তেলের দাম হয়তো আমরা সমন্বয় করতে পারবো। সেটার হিসাবটা এখনও যাচাই-বাছাই চলছে। আমরা আশা করছি, এখানে হয়তো একটা পরিবর্তন আসবে।

ইবাংলা/তরা/২৯ আগস্ট ২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us