বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিস্কার, নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হবে না। নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই একটি নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হতে হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়ে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে বিএনপি সেই নির্বাচন মেনে নেবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন না হলে বিএনপি সেই নির্বাচনে যাবে না।’
শনিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘১ অক্টোবর ২০০১: নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সর্বশেষ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের দিন ঘনিয়ে এসেছে। এখনও সময় আছে, নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তৈরি করে সরে যান এবং জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে দিন।’
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সবাই সুশৃঙ্খল হোন, বিশৃঙ্খল হবেন না। শুধু পদের জন্য দৌঁড়াবেন না। নতুন কমিটি হচ্ছে, তার জন্য শোডাউন করবেন না। এটা করবেন যখন আন্দোলনের ডাক আসবে, যখন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যখন আমরা মাঠে নামব। তখন শোডাউন করবেন, রাস্তা দখল করবেন। এটাই পথ। আন্দোলন ছাড়া, গণআন্দোলন ছাড়া, গণঅভ্যুত্থান ছাড়া এই দানবকে সরানো যাবে না। দানবকে সরাতে হলে আমাদের সমস্ত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে, সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণঅভ্যুত্থান করে মুক্ত বাতাস, মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্ত গণতন্ত্র সৃষ্টি করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো জনসমর্থন নেই। রাজনৈতিকভাবে তারা সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে। যদি কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে তারা ৩০টা আসনও পাবে না। এই কারণে তারা সমস্ত রাষ্ট্রকে দলীয়করণ করেছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভাগ এমনকি গণমাধ্যমকেও তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন আবার চেষ্টা করছে- ওই ধরনের একটা নির্বাচন করে আবারও তারা ক্ষমতায় আসবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধবংস করেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বিভিন্ন ‘ভয়ংকর’ সব আইন করে জনগণের কথা বলার অধিকারকে ‘সরকার পায়ের তলায় দাবিয়ে রেখেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে তারা সংবিধান বিরোধী কথা বলে। অথচ সংবিধানকে শেষ করে দিয়েছে, কাটা-ছেড়া করেছে এই সরকার। পুলিশ দিয়ে, প্রশাসন দিয়ে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিএনপিকে দমিয়ে, দেশবাসীকে দমিয়ে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকবে। কিন্তু তারা একটা ইতিহাস ভুলে গেছে, পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারেনি। আমাদের এখন একটাই কথা যে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রম–খ বক্তব্য রাখেন। সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজউদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আমিনুল হক, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।