‘নৌকাত ওঠার সময় দুলতে ছিল। মাঝিরা কইছিল কিছুই হবে না। যাওয়া যাবে। অনেক চাপাচাপি করে নৌকাখান ছাড়ল। স্বামী, দুই সন্তান ও শাশুড়িসহ উঠেছিলাম। দুলতে দুলতে মাঝখানে গিয়ে উল্টে গেল। আমার বুকে বাচ্চাটা ছিল। বাম হাত দিয়ে বাচ্চাটা ধরে রাখছি আর ডান হাত দিয়ে নৌকা।
আমার পুরো শরীর ডোবা। পানির নিচে অনেকক্ষণ ডুবেছিলাম। তারপর আর কিছু বলতে পারছি না। পরে ঘাটে এসে জ্ঞান আসে। আমি আর বাচ্চাটা পড়ে আছি। কে ঘাটে নিয়ে আসছে কিছু বলতে পারছি না। কিন্তু আমার মেয়েটার এখনো খুঁজ পাইনি। আমার মেয়ের সন্ধান চাই। লাশটা হলেও আমাকে উদ্ধার করে দিন।’
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে আট মাস বয়সী শিশুসন্তান সম্পদ রায়কে সঙ্গে নিয়ে কান্না করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নৌকাডুবিতে বেঁচে যাওয়া বিপাশা চন্দ্র (৩২)।
আরও পড়ুন…পঞ্চগড়ে নৌকাডুবি : নিহত বেড়ে ৩২
তিনি বলেন, আমার স্বামীসহ বাকি লোকগুলোর কিছু আমি বলতে পারছি না। চারপাশে শুধু ডুবে যাওয়া দেখেছি। আমি আর কিছু বলতে পারছি না। আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।
বিপাশার স্বামী বিলাশ চন্দ্র বলেন, নৌকা ডুবে যাওয়ার পর আমি নৌকার উল্টো পাশে উঠি। ওঠার পর শুধু সবার গলা আর মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার স্ত্রী-সন্তানকে খুঁজে পায়নি। মাকে দেখামাত্রই উদ্ধার করেছি। পরে ছেলে আর বউকে পেয়েছি। মেয়ে আমার এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে মহালয়া দেখতে আউলিয়া ঘাট থেকে বদশ্বেরী ঘাটে যাচ্ছিল নৌকাটি। নৌকায় ১০০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিল। ছাড়ার শুরুতেই নৌকাটি দুলতে থাকে। দুলতে দুলতে মাঝপথে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের লাশ পাওয়া গেছে। আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকজন বাদে বাকি সবার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল নিখোঁজ ছিল ৬৫ জন। আজ সকাল থেকে ১০ জনের লাশ পাওয়া গেছে। নিখোঁজ বাকিদের উদ্ধারে কাজ চলছে।
ইবাংলা/জেএন/২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.