চলতি শিক্ষাবর্ষের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করার পর এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষাও বাতিল হতে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য সার-সংক্ষেপ পাঠিয়েছে। সম্মতি পাওয়া গেলেই আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল ঘোষণার দিনও এমনই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, পিইসি-ইবতেদায়ি নিয়েও একই সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এদিকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চলতি শিক্ষাবর্ষের শ্রেণিভিত্তিক বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
স্বাভাবিক সময়ে বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বর মাসে নেওয়া হয়ে থাকে। এবার করোনার কারণে শিক্ষাবর্ষের নয় মাস পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে সীমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হয়েছে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রাথমিকে ৫ম শ্রেণির এবং মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার জন্য দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের দ্বাদশ শ্রেণির নিয়মিত পাঠদান চলছে।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের অন্য সব ক্লাস চলছে এখনো সপ্তাহে এক দিন করে। এ অবস্থায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর চলতি বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের পরই মূলত এ বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়। আসন্ন নভেম্বর ও ডিসেম্বর জুড়েই ওই দুটি পরীক্ষার জন্য সময়সূচি বরাদ্দ হলেও অন্য সব পরীক্ষা গ্রহণের মতো সময়-প্রস্তুতি এবং অবকাঠামো এখন নেই। তাই বাধ্য হয়ে বিকল্প চিন্তা করছেন নীতি-নির্ধারকরা।
এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাও এ ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। যদিও প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিটে বাড়ির কাজ ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষা না হলে ক্লাসভিত্তিক অ্যাসেসমেন্ট ও ওয়ার্কশিটে বাড়ির কাজ এবং মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়ার্কশিটে বাড়ির কাজ গত এপ্রিল মাস থেকে হয়ে আসছে।
জুলাই থেকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ১৯ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলেও এ শিক্ষাবর্ষে তেমন ক্লাস হয়নি। বছরের পূর্ণ সিলেবাসের পাঠ শেষ হয়নি। তাই এখন মূল্যায়নের একমাত্র মাধ্যম হবে এগুলোই (ওয়ার্কশিটে বাড়ির কাজ এবং অ্যাসাইনমেন্ট)। তবে কাউকে বা কোনো পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এবার অটোপাসের কোনো চিন্তা নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে নেই। যে কোনো উপায়ে এক বা একাধিক দিক থেকে মূল্যায়ন করেই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বৃহস্পতিবার যায়যায়দিনকে বলেন, এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু অ্যাসাইনমেন্টে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করা হবে না। অন্য কোনো মাধ্যমকেও মূল্যায়ন ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হতে পারে।
অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের জন্য মাত্র ১০ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করা হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এবং ২০১৩ সালে প্রণীত সর্বশেষ কারিকুলামের প্রকল্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অতীত মূল্যায়ন বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। তবে, বারবার না। পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মাধ্যম। এটিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মেধার মূল্যায়ন ছাড়া জাতি গড়ে ওঠে না।