প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাঃ নিশ্চিত হচ্ছে শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিপূর্ণ পূর্ব প্রস্তুতি
হাসান মারুফ
সরকারের শিক্ষাবান্ধব নীতির ফলে বাংলাদেশ শিক্ষায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। আর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাও এর ব্যতিক্রম হয়। শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষা শুরু করার আগের শিক্ষাই হলো প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। যেখানে শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপূর্ণ রুপে বিকশিত করে স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় হাতে খড়ির জন্য প্রস্তুত করা হয়। মানুষের জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই প্রস্তুতির দরকার হয়।
আর সেটা যদি হয় ছোট্ট শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তুতিটা আরও বেশি প্রয়োজন। কারণ পড়া-শোনা শুরুর পুর্বে তার প্রতি শিশুর ভালো লাগা, ভালোবাসা ,আগ্রহ গড়ে উঠা প্রয়োজন। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করেই জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০- এ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন…সুবর্ণচরে কলেজ প্রতিষ্ঠা, ইউনিয়ন বিভাজন বিষয়ে মতবিনিময় সভা
আমাদের দেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করছে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সেই সাথে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো শিশুদের আনন্দময় পরিবেশে বয়স ও শিশুর সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে তাদের দৈহিক, মানসিক, ভাষাগত, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিয়,নান্দনিক উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের শিক্ষার জন্য গড়ে তোলা ।
লাল ঝুটি কাকাতুয়া ধরেছে যে বায়না ,চাই তার লাল ফিতে চিরুনি আর আয়না গানে অথবা আতা গাছে তোতা পাখি ছড়ায় তাদের দিন শুরু হয়। বলছি প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের হেসে খেলে বেড়ে উঠার গল্প। আগে এই ধরনের পরিবেশ পেতো শুধু হাতে গোনা শিক্ষিত সচেতন পরিবারের শিশুরা তাদের মায়ের হাত ধরে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক শিশুও হেসে খেলে তার শিক্ষা গ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারছে।
এখানে শিশুদের উপযোগী খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের সামাজিকীকরণ শিক্ষা, নাচ-গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, গল্প বলা, গণনা করা, বর্ণমালা শিক্ষার ক্ষেত্রে দক্ষ ও প্রত্যয়ী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আছে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক। রয়েছে চৌদ্দটি মজার মজার গান, আছে ছাব্বিশটি মজার ছড়া।
শিশুদের জন্য নেই পড়ার চাপ, না আছে পরীক্ষা। বরং শ্রেণী কার্যক্রম সহায়িকা হিসেবে আছে আমার বই, এসো লিখতে শিখি, ফ্ল্যাশ কার্ড, ফ্লিপ চার্ট, ব্যঞ্জণচার্ট, স্বরবর্ণ চার্ট। আছে শিক্ষনীয় ,আনন্দদায়ক গল্পের বই টিং টংকের গল্প, লাল পোকার গল্প, অপুর বিড়াল, বেড়ানোর একদিন, বর্গরাজা ও ত্রিভুজরানি, চাচা বাজারে যান,
ফুল ফোটার আনন্দ, খুশি একদিন কুসুমপুরে, কোথায় আমার মা, মজার মামা ইত্যাদি গল্পের বই। রয়েছে সুসজ্জিত শ্রেণী কক্ষ, যেখানে আছে খেলার সরঞ্জাম, শিক্ষা সহায়ক সকল ব্যবস্থা। প্রতি বছর দেয়া হচ্ছে প্রাক- প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা বাজেট।
আরও পড়ুন…নদী ভাঙ্গনে আতঙ্কে ; ৮ বার ঘর ভাঙছি এখন সব জমি নদীতে, আমি কোথায় যাব
শিশুর সার্বিক বিকাশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি বিষয়। আমাদের দেশে্র প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত যুগোপযোগী ও আধু্নিক। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার এই ইতিবাচকতাও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ব্যাপক প্রচার- প্রচারণা চালানো উচিত। আজকের শিশুই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ । শিশু পরিপূর্ণ ভাবে বিকশিত হোক। তাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ । সরকার যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করছে। সেই সাথে আমাদের এগিয়ে আসাও জরুরী।
ইবাংলা/জেএন/০৫ অক্টোবর ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.