জামায়াতপুত্র হাশেম রেজা আ. লীগের উপকমিটির নেতা : জালজালিয়াতি হামলা-মামলাই যার নেশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক সময়ের বেতনভুক্ত পিয়ন আবু হাশেম ওরফে হাশেম রেজা। কিছুদিনের জন্য ছিলেন একটি অখ্যাত পত্রিকার বিজ্ঞাপণ প্রতিনিধি। অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, গরীব ও অভাবী সংসারের আবু হাশেমের বেকার জীবনের কথা চিন্তা করে তারই এলাকার এক সিনিয়র সাংবাদিকের অধিনস্ত একটি পত্রিকায় পিয়নের চাকরি দিয়ে তাকে ঢাকা শহরের পথ চেনার সুযোগ করে দেন।

তথ্য প্রমাণ সূত্রে জানা যায়, তার বাবা ছাব্দার আলী মোল্লা নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতের সক্রিয় একজন কর্মী ছিলেন এবং নিয়মিত মাসিক চাঁদা পরিশোধ করতেন। জামায়াতের নির্বাচনী তহবিলে নিয়মিত চাঁদা দানকারি কর্মীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হশেম রেজার বাবা ছাব্দার আলী মোল্লা। আর এসবের যথেষ্ঠ প্রমান রয়েছে ইবংলা প্রতিবেদকের হাতে।

আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান

জামায়াতের স্থানীয় নেতা ও আমীর সরফরাজ উদ্দিনের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসাবে ও বেশ আলোচিত ছিলেন হাশেমের বাবা। যার প্রমান স্বরূপ একটি ভিডিও ক্লিপ রয়েছে ইবাংলার হাতে।

সরফরাজ উদ্দিনের একান্ত এক সাক্ষাতকারের ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে আরো জানা গেছে, বাবার জামায়াতের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম সহযোগী ছিলেন হাশেম রেজা। যার কারণে জামায়াত নেতাদের কাছে একসময় হাশেম রেজার খুবই কদর ছিল। বাবার রাজনৈতিক বিভিন্ন কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বলে গ্রামের একাধিক লোক ইবাংলার প্রতিবেদককে জানায়।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিরা জানায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার সাথে সাথে ভোল পাল্টায় এবং আওয়ামী নেতাদের সাথে মিশে যায় ধ্রুত হাশেম রেজা। নানা ছলচাতুরী করে রাতারাতি আওয়ামী লীগ বনে যায় এবং আওয়ামী যুবলীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আসা-যাওয়া করতে থাকে। ফলে অনুপ্রবেশকারি হিসেবে অনেকের কাছে চিহ্নত হয়ে হাইব্রীড আওয়ামী লীগ বনে যায় হাশেম রেজা।

সুচুতুর হাশেম রেজা নানা কৌশলে যুব লীগের অভ্যন্তরে আসা-যাওয়ার বদৌলতে কিছুদিনের মধ্যেই যুবলীগের সহ-সম্পাদকের পদ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করে এবং কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়। কথিত আছে তৎকালীন যুবলীগ নেতাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে সহ সম্পাদকের পদ ব্যবহারের সুযোগ করে নেয়। অফিসিয়ালী কোন কমিটিতেই যারা কোন স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন…ইবাংলা সম্পাদক ইস্রাফিলকে হত্যার হুমকি

অব্যাহতভাবে এ ভুয়া পদ পরিচয় দানের এক পর্যায়ে অর্ধ কোটি টাকা প্রদান করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজ কল্যাণ উপকমিটির সদস্যপদ কিনে নেওয়ার অভিযোগ ও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ত্রান ও সমাজ কল্যাণ উপকমিটির সদস্যপদ নিয়ে নিজ এলাকাসহ দেশের সর্বত্র নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে জাহির করছেন তিনি। আর এতে অবৈধভাবে টাকা অর্জনের পথ সুগম করছে বলে নানা মহলে চাউর হচ্ছে।

এলাকাবাসি আরো বলেন, জামায়াত মতাদর্শ পরিবারে সন্তান হাশেম রেজা কোন অদৃশ্য শক্তির ছোঁয়ায় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের তৃণমূলের ত্যাগি নেতা-কর্মীদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে অপমান অপদস্ত করে চলছেন?

দলের হেভিওয়েট প্রভাব খাটিয়ে তার স্বার্থসিদ্দির জন্য নিরীহ লোকজনদের হামলা মামলার মাধ্যমে হয়রানি করার বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। অনেক নিরীহ মানুষদের নানা ধরণের হায়রানি, হামলা মামলা দিয়ে নাস্তানাবুদ করে ভিটেবাড়ী ছাড়া করার অভিযোগও আছে অনেকের। হাশেম রেজার এই অশুভ শক্তির লাগাম টেনে ধরার মতো ক্ষমতা যেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগেরও কারোরই নেই।

কূখ্যাত সম্পাদক হাশেম রেজার হেলিকপ্টার বিলাস

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবু সুজিত রায় নন্দীর কাছে এসব বিষয় মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি মুঠোফোনে বলেন এসব বিষয় আপনি ডিআইজি হাবিব সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন। ডিআইজি হাবিব সাহেব ছাত্রলীগ করা মানুষ ওনার সুপারিশেই হাশেম রেজার মতো মানুষ আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজ কল্যাণ উপকমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা আরো বলেন, এর বিরুদ্ধে জামায়াত পরিবারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আরো শুনেছি এ বিষয় তার বিরুদ্ধে আমাদের যাচাই বাছাই চলছে। এর সত্যতা মিললে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। ডিআইজি হাবিবুর রহমানের কাছে এ বিষয় জানতে তার সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলেরই স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় একাধিক নেতৃবৃন্দ আক্ষেপ করে ইবাংলা প্রতিবেদকের কাছে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীর অভাব নেই তারপরও জামায়াতপুত্রদের দলে ভেড়াতে হবে কেন? জামায়াত পরিবারের এক কালের শিবির কর্মী হাশেম রেজার মতো একজনকে ত্রান ও সমাজ কল্যাণ উপকমিটির সদস্যপদ দিতে হবে কেন?

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলে,  তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতৃবৃন্দ জানান, হয়তো অদৃশ্য শক্তির হাত ধরেই শিবির কর্মী ও জামায়াতপুত্র হাশেম রেজা জায়গা করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগে। হতে পারে সেটা কিছু অর্থের বিনিময়েও। বলেন, এখন অতীতের ইতিহাস কারোর জানার বাহিরে থাকে না। নেতারা আরো বলেন, এখন আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ তা না হলে আগা গোড়া না জেনে জামায়াত শিবিরের লোক কিভাবে দলে ঢুকে পরে?

এখানেই শেষ নয় জামায়াত শিবিরকে পৃষ্ঠ পোষকতা ছাড়াও তারেক জিয়া পরিবারের সাথে রয়েছে গভীর সখ্যতা। অপ্রকাশিত এক সূত্রে জানা গেছে হাশেম রেজার প্রত্রিকা অফিস (৭১ মতিঝিল) তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান গংদের সঙ্গে একটা চুক্তিপত্র থাকলেও কোন রকম ভাড়া বা সর্ভিস চার্জ প্রদান করেন না।

কথিত আছে যে এর বিনিময় হাশেম রেজার সঙ্গে তারেক রহমানের হট কানেকশন রয়েছে। আর সাজাপ্রাপ্ত বিদেশে পলাতক তারেক রহমানের যে কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার কারণেই ৭১ মতিঝিল ভবনে আমার সংবাদ পত্রিকার অফিসের নানা সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন।

অবৈধ টাকা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করার মাধ্যমে গড়ে তুলেছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভখ্যাত গনমাধ্যম হিসেবে দৈনিক আমার সংবাদ ও ডেইলী পোষ্ট নামে দুটি দৈনিক পত্রিকা। এই পত্রিকা দুটিরও ঘোষণাপত্র গ্রহণে রয়েছে তথ্য গোপন ও সনদ জালজালিয়াতির ব্যাপক অভিযোগ। যা ১৯৭৩ সনের ছাপাখানা ও প্রকাশনা আইনের গুরুতর অপরাধ।

পত্রিকা অফিসে চাকরি করেন এমন অনেকের কাছ থেকে জানা গেছে, সার্টিফিকেট জালজালিয়াতি করে পত্রিকা দুটির ডিক্লারেশন নিয়ে দেশের সর্বত্রই চাঁদাবাজি, নিয়োগ বানিজ্য ও তদবীর বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। যা অনেক কিছুই ধরা ছোাঁয়ার বাইরে। এসব কাজের ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করছে পত্রিকা। পত্রিকায় নিউজ ছাপানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রশাসন, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও নিজের কাছে থাকা আগ্নেয়স্ত্র দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করে চলছে।

একাধিক সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতারা বলেন, সংবাদপত্রের জগতের কলঙ্কজনক ইতিহাস সৃষ্টি করছে হাশেম রেজা। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে গেলে হামলা মামলা দিয়ে দাবিয়ে রাখে। এছাড়াও কারো সঙ্গে কোন ধরণের বাকবিতন্ডা হলেই তার কাছে থাকা আগ্নেয় অস্ত্র দিয়ে যে কাউকে হত্যার হুমকি প্রদান করেন।

অন্যসূত্রে জানা গেছে, বিডিআর বিদ্রোহের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ঢাকা ৮ আসনের সংসদ সদস্য নাসির উদ্দীন আহমেদ পিন্টুর বডিগার্ড ছিলেন হাশেম রেজার শ্যালক সুমন। এই সুমনের বিরুদ্ধেও একাধিক নাশকতার মামলার থাকারও তথ্য মিলছে। গুণজন আছে প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদের গচ্ছিত রাখা বড় অংকের একটি টাকা ছিলো শ্যালক সুমনে নিকট। সেই টাকা দিয়ে আজকের হাশেম রেজার সম্পদের ধনকূবখ্যাত বলে মনে করছেন অনেকে।

অবৈধভাবে জায়গা দখল চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, অস্ত্রপ্রদর্শন করে ভয়বীতি দেখানো তার নিয়মিত রুটিন কাজ। যার ফলে তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানা এবং কোর্টে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। যাহার নং ২৮৬/২০২২,……….। মামলাগুলো বিচারাধীন। চলবে…

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us