ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নিহত ১১

ডেস্ক রিপোর্ট

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নৌকাডুবি ও সৃষ্ট ঝড়ে গাছ পড়ে পাঁচ জেলায় প্রায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। নিহতের মধ্যে কুমিল্লায় তিনজন, সিরাজগঞ্জে দুজন, ভোলায় চারজন ও নড়াইল, বরগুনা একজন নিহত হয়েছেন।

কুমিল্লা : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেশাখাল এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের এক সন্তান নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- মো. নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী সাথি আক্তার ও মেয়ে লিজা আক্তার। নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান মেহেবব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় যমুনা নদীর ক্যানেলে ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে নৌকাডুবিতে মা-ছেলে নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্বমোহন ও শিল্পপার্কের মাঝখানে ওই নদীতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্বমোহন গ্রামের খোকনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৮) ও ছেলে আরাফাত হোসেন (২)।

আরও পড়ুন…ঢাকায় না পেরে ইয়াঙ্গুন-সিলেটে অবতরণ

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিল্পপার্ক এলাকা থেকে লগি-বৈঠাচালিত একটি ছোট্ট নৌকাযোগে আয়েশা খাতুন ও তার ছেলেসহ ছয়জন পূর্বমোহনপুরে ফিরছিলেন। এ সময় মাঝপথে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তীব্র বাতাস শুরু হলে নৌকাটি ডুবে যায়। পরে আরাফাত মায়ের কোল থেকে নদীতে পড়ে গিয়ে তাৎক্ষণিক মারা যায় ও আয়েশা খাতুনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, সোমবার রাতে নৌকা ডুবে গেলে অন্যান্যরা পাড়ে উঠলেও শিশু আরাফাত পানিতে ডুবে যায়। এ সময় তাকে খুঁজতে থাকেন তার মা আয়েশা খাতুন। পরে আরাফাতের মৃত্যু ঘটনাস্থলেই হয়। এ সময় বাকিরা সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে আয়েশা খাতুনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন…বিমান বাহিনীর প্রতিটি ঘাঁটিতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু

ভোলা : ভোলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সদর, লালমোহন, চরফ্যাশন ও দৌলতখান উপজেলায় চারজন নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে তিনজন ও মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোরের দিকে একজন নিহত হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন- ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চেওয়াখালী গ্রামের মো. মফিজুল ইসলাম (৬০), চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের মো. মনির হোসেন (৩০), লালমোহন উপজেলার লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাবেয়া বেগম (২৫) ও দৌলতখান পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাতিজা বেগম (৬০)।

জানা গেছে, সদরের মফিজুল ইসলাম একটি গাছ ভেঙে বসতঘরের ওপরে পড়লে চাপা পড়ে নিহত হন। লালমোহনের রাবেয়া বেগম জোয়ারের পানিতে ডুবে নিহত হন। দৌলতখানের খাতিদা বেগমও ঘরের ওপর গাছ পড়ে চাপায় নিহত হন। এ ছাড়া চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জে মনির মোটরসাইকেল করে যাওয়ার সময় গাছের ডাল ভেঙে শরীরে পড়ে নিহত হন।

ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম ভোলা সদর ও দৌলতখানের হতাহতের তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন। চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল নোমান বলেন, চরফ্যাশনে একজন নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ঘর পুরো বিধ্বস্ত ও এক হাজারের অধিক ঘর আংশিক বিধস্ত হয়েছে। এদিকে লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, লালমোহনে একজন নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন…৬ ঘণ্টা ধরে হালনাগাদ তথ্য দিতে পারছে না আবহাওয়া অফিস

নড়াইল : ঘূর্ণিঝড়ে নড়াইলে গাছের ডাল পড়ে মর্জিনা বেগম (৩২) নামে এক গৃহপরিচারিকা নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ছেলে জিহাদকে (১১) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লোহাগড়া পৌর এলাকার রাজুপুর গ্রামের আব্দুল গফ্ফারের বাড়িতে ভাড়া থেকে বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন মর্জিনা। তিনি বাগেরহাটের স্থায়ী বাসিন্দা। প্রতিদিনের দিনের মতো সোমবার সকালে বাসা থেকে কাজের উদ্দেশে বের হন তিনি।

আরও পড়ুন…সিত্রাং: নোয়াখালীত ১লাখ ৬ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে

পথে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় পৌঁছালে মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে আহত হন মর্জিনা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিরউদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বরগুনা : বরগুনা সদর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝোড়ো বাতাসে বসতঘরে গাছ উপড়ে পড়ে এক বৃদ্ধা (১১৫) নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার সোনাখালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম আমেনা খাতুন (১১৫)।

নিহতের পরিবার জানান, সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া ঝড়ো বাতাসে তাদের বাড়ির পাশে থাকা চাম্বল গাছ উপড়ে বসতঘরের ওপর পড়ে। এ সময় ঘর ও গাছের নিচে চাপা পড়ে আমেনা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার সন্ধ্যার আগেই স্থানীয় ইউপি সদস্য আমেনা খাতুনের বাড়ি এসে তার সন্তান ও নাতিদেরকে নিয়ে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যেতে বলেন। আমেনা খাতুন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যেতে রাজি হননি। নাতিরা তাদের ঘরে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। আমেনা খাতুন ছোট্ট একটি ঘরে একাই থাকতেন।

আরও পড়ুন…সিত্রাংয়ের কারণে ৩ বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সোমবার রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

ইবাংলা/জেএন/২৫ অক্টোবর ২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us