হিজাববিরোধী বিক্ষোভে সময় আধা-সামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ইরান। মঙ্গলবার ইরানের একটি আদালতে ওই পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে। মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভে ‘ভীতি ছড়ানোর’ লক্ষ্যে বিক্ষোভকারীদের এই সাজা দেওয়া হয়েছে বলে দেশটির মানবাধিকার কর্মীরা নিন্দা জানিয়েছেন।
দেশটির বিচার বিভাগের মুখপাত্র মাসুদ সেতায়েশি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে তিন শিশুসহ আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে এই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে।
আরও পড়ুন…ডেকে নিয়ে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ, প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা
আদালতের কৌঁসুলিরা বলেছেন, আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য রুহুল্লাহ আজমিয়ানকে (২৭) নগ্ন করার পর হত্যা করেছে একদল বিক্ষোভকারী। তারা নিহত প্রতিবাদকারী হাদিস নাজাফির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় রুহুল্লাকে হত্যা করেন। বিক্ষোভ শুরুর পঞ্চম দিনে অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর মারা যান নাজাফি।
তেহরানে হিজাব না পরার কারণে গত সেপ্টেম্বরের মাঝের দিকে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনী। এর তিন দিন পর পুলিশি জিম্মায় থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কুর্দি বংশোদ্ভূত এই তরুণী। পরে কোমায় নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৬ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।
এই তরুণীর মৃত্যুর পর দেশটিতে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু হয়; যা বর্তমানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ২০০ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির সরকার স্বীকার করেছে। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, হিজাববিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ সামলাতে রোববার ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরি বিতর্কিত নৈতিকতা পুলিশকে বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও দেশটির বিক্ষোভকারীরা নৈতিকতা পুলিশের বিলুপ্তির ঘোষণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এখনও কিছু কিছু শহরে পুলিশের বিশেষ এই শাখার সদস্যদের টহল দিতে দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন…নড়াইলে অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন গ্রেফতার
ইরানের বিচার বিভাগের ওই মুখপাত্র বলেছেন, গত ৩ নভেম্বর তেহরানের পশ্চিমে কারাজ এলাকায় আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য আজমিয়ানকে ছুরিকাঘাত, পাথর নিক্ষেপ, কিলঘুষি, লাথি মেরে হত্যা করেন অভিযুক্তরা। তিনি রাষ্ট্র-অনুমোদিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী বাসিজের সদস্য ছিলেন। এই বাসিজ মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সদস্যরা ইরানের প্রভাবশালী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সাথে যুক্ত।
ইবাংলা/জেএন/৭ ডিসেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.