সারাদেশে নানা আয়োজন ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে উদযাপন হলো মহান বিজয়ের ৫১ বছর। জাতির সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ। । বিজয়ের এই দিনে বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষেরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে উৎখাত, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিসহ সকল ‘অন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ রুখে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীসহ সারাদেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে দিবসটি উদযাপিত হয়েছে।
সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে উজ্জীবিত জাতি দিবসটি উদযাপন করে অন্য রকম অনুভূতি নিয়ে। শীতের কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে সর্বস্তরের মানুষ ভোর থেকেই সাভারে স্মৃতিসৌধের বাইরে ও আশপাশের মহাসড়ক এলাকা এবং ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে সমবেত হতে থাকে।
আরও পড়ুন…মধুপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন
ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ফুল, মাথায় বিজয় দিবস লেখা ব্যান্ড, জাতীয় পতাকা নিয়ে স্মৃতিসৌধে নেমেছিল জনতার ঢল। বিনম্র চিত্তে সমগ্র জাতি ৩০ লাখ শহীদকে আরও একবার জানিয়ে দিল ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না।’দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
সকাল সাড়ে ৬টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ সময় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, আব্দুর রহমান ও কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম।
আরও পড়ুন…ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত
সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিজয় উল্লাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধ চত্বর মুখরিত ছিল বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায়। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির ধ্বংসাত্মক, নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে নানা স্লোগান, দেশাত্মবোধক গান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বেজে চলছিল বিরামহীনভাবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার এই ঢল অব্যাহত থাকে বেলা ১ টা পর্যন্ত।
একে একে বেদীতে শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা, বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়।
আরও পড়ুন…বরগুনা বিএনপির বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন
এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডিন্থ ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর দলীয় নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এদিকে সকালে রাজারবাগ স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডিএমপি’র একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে শহীদদের সম্মান জানায়।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সকল সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙ-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়।
শহীদদের আত্মার শান্তি, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
আরও পড়ুন…ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের বিজয় দিবস উদযাপন
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।
ইবাংলা/জেএন/১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.