ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (১১শ বিজেএস) ফোরাম। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সংগঠনের সভাপতি ছগির আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আসমা জাহানের সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, এজলাস কক্ষে বেআইনিভাবে বিচারিক কাজে নগ্ন হস্তক্ষেপ ও বিচারকের সঙ্গে যে শিষ্টাচারবহির্ভূত ও অশালীন আচরণ করেছে তা অনভিপ্রেত, ন্যক্কারজনক ও অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন…অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ: শিক্ষা উপমন্ত্রী
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বন্ধে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করা হয়েছে প্রতিবাদলিপিতে। প্রতিবাদলিপিটি প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী, আইন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়াও ওই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস ( ১১শ বিজেএস) ফোরাম। সংগঠনের সভাপতি ছগির আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আসমা জাহান স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২ জানুয়ারি বিচার চলাকালীন এজলাসে কতিপয় স্বার্থান্বেষী আইনজীবী কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নারী ও শিশু নির্যতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচরককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, প্রাণনাশের হুমকি, বিচারিক কাজে নগ্ন হস্তক্ষেপসহ আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের মারধর ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার মতো নিন্দনীয় কার্যক্রম সংঘটিত করেন। এতে বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং বিচারকার্য ব্যাহত হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, বিচারককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, প্রাণনাশের হুমকি, বিচারিক কাজে নগ্ন হস্তক্ষেপসহ আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের মারধর ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার মতো নিন্দনীয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং এ ঘটনায় ১১শ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস ফোরামের সদস্যরাসহ সব পর্যায়ের বিজ্ঞ বিচারকদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
১১শ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস ফোরামের পক্ষ থেকে ওই ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যে কোনো ধরনের অত্যাচার, নিপীড়ন, পেশিশক্তির বিরুদ্ধে ১১শ বিজেএস ফোরাম বিচার অঙ্গনে কর্মরত বিচারক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশে আছে এবং থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর একটি মামলাকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিতণ্ডা হয়। সময় পার হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুসারে মামলাটি নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। সে অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করতে থাকে।
এ ঘটনায় আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। তারা বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ, কর্মচারীদের মারধর, মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার পাল্টা অভিযোগে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন গত বুধবার থেকে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। বৃহস্পতিবার সকালে কর্মচারীরা তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন।
আরও পড়ুন…অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ: শিক্ষা উপমন্ত্রী
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার থেকে আইনজীবীরা কর্মবিরতির কর্মসূচি শুরু করে। এই কর্মসূচি চলবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। আইনজীবী ও কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের অচলাবস্থা চলছে।
একই দিন হাইকোর্ট বিচারককে গালাগাল ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় তিন আইনজীবীকে তলব করেছেন। ১৭ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে সশরীরে হাজির হয়ে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
ইবাংলা/জেএন/৬ জানুয়ারি, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.