আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই বেশ কিছু পরামর্শ ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ। উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহ ঢাকায় অবস্থান করছেন। গতকাল রবিবার তার নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া ও আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে, সেসব বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি আইএমএফ কীভাবে সেসব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফের প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মুখপাত্র।
মেজবাউল হক বলেন, বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার পক্ষে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে কথা হয়েছে। বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের পদক্ষেপ তুলে ধরেছি। আইএমএফ এসব নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছে। আমরা সবকিছু তুলে ধরেছি।
ঋণ ও আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘তবে আইএমএফের ঋণ পাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না, নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পাব।’ ধারাবাহিক কর্মসূচির আওতায় আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। তিনি বলেন, আর্থসামাজিক খাত নিয়েও আইএমএফ কথা বলেছে।
আরও পড়ুন…চীন মহামারী সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি শেয়ার করে যাবে: ওয়াং ওয়েন পিন
বৈশ্বিক অর্থনীতির যে চ্যালেঞ্জ, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি সেসব বিষয়ে তারা জেনেছে। আমরা যে প্রো-অ্যাকটিভ ইকোনমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গিয়েছি, সেটা নিয়ে কথা বলেছে। সব বিষয় তারা শুনেছে এবং প্রশংসা করেছে।
আইএমএফের কোনো প্রশ্ন ছিল কি না, জানতে চাইলে মেজবাউল হক বলেন, তারা জানতে চেয়েছে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আমরা কী কী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। আমরা তাদের কাছে সেই সব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছি। তারা শুনেছে এবং প্রশংসা করেছে। করোনাকালে কীভাবে আমরা পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দিয়েছি, কী কী পদক্ষেপ নিয়েছি—সেসব বিষয় তাদের বলেছি, তাদের সামনে তুলে ধরেছি।
এ সময় গভর্নরের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির নীতিগুলো কীভাবে প্রণয়ন করা যায় এবং তার প্রয়োগ করার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির প্রভাব মোকাবিলায় আইএমএফ কোন কোন খাতে অর্থায়ন করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। আগামী ৩১শে জানুয়ারি আইএমএফের বোর্ড সভায় ঋণ চূড়ান্ত হবে বলে প্রত্যাশা বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্রের।
উল্লেখ্য, ১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আইএমএফের ডিএমডি ঢাকা সফর করবেন। তিনি এমন সময় ঢাকা সফর করছেন, যখন সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনা চলছে। অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহের এই সফরে ঋণের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে নেই বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন আইএমএফের ডিএমডি। তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করছেন, অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। বাংলাদেশে আইএমএফ কাউন্টার-পার্ট হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন…হিরোকে কেউ জিরো বানাতে পারেনি ভবিষ্যতেও পারবেনা
বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ সফরের অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকায় পৌঁছান অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। আইএমএফ বলছে, এই সফর বংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো জোরদার করতে সহায়ক হবে বলে তারা আশা করছে।
ইবাংলা/জেএন/১৭ জানুয়ারি, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.