এজেন্ট ব্যাংকিং সার্ভিসসমূহ নিয়ে ধারণা। উক্ত সেবা সম্পর্কে অবগত হলে অন্যান্য ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় কি কি সেবা থাকে অল্প হলেও আয়াত্তে নিতে পারবেন। সিঙ্গাপুরে নির্মাণ খাতে কাজ করার সময় প্রবাসী আয় পাঠাতে গিয়ে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় হয়।
একপর্যায়ে দেশে ফিরে কিছু করার চিন্তা করি। তখন ওই কর্মকর্তারা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট খোলার পরামর্শ দেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুঞ্জেরহাট বাজারে প্রথম একটি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট খুলি। শুরুর থেকেই সাড়া পেয়েছি।
বর্তমানে বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলায় আমার মোট পাঁচটি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট রয়েছে। এসব শাখায় প্রায় ১৫ হাজার ব্যাংক হিসাবধারী গ্রাহক আছেন। পাঁচটি শাখায় গ্রাহকদের মোট আমানত রয়েছে ৫৮ কোটি টাকা।
এখন পর্যন্ত সাত কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে পেরেছি। সব মিলিয়ে মাসে প্রায় আট লাখ টাকা আয় হয়। আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন ৩০ জন কর্মী। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নিরাপদ আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। পাশাপাশি এই পেশা সামাজিকভাবে আমাদের অনেক সম্মানিত করেছে।
আরও পড়ুন…পাকিস্তানের জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়, শহরগুলো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
এজেন্টদের কমিশন বাড়ানো দরকার
ব্যাংক এশিয়া ২০১৪ সালে ১০ জনকে নিয়ে একটি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পাইলট প্রকল্প শুরু করে। আমি ছিলাম সেই ১০ জনের একজন। গত ৯ বছরে আমার কাজের পরিসর অনেক বেড়েছে। বর্তমানে আমার মোট তিনটি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট আছে। তাতে প্রায় ৯ হাজার গ্রাহক ও ৪১ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। পাশাপাশি প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঋণও দিতে পেরেছি আমরা।
আমানত সংগ্রহ, ঋণ প্রদান, প্রবাসী আয় সংগ্রহ ইত্যাদি কয়েকটি খাতে আয়ের ওপর ভিত্তি করে মূল ব্যাংক আমাদের কমিশন দেয়। এতে মাসে পাঁচ লাখ টাকার মতো আয় হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সেবায় কিছু চ্যালেঞ্জও দেখতে পাচ্ছি।
তার মধ্যে একটি হচ্ছে, কমিশন বাড়েনি। গত কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, খরচও বেড়েছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়েনি। এজেন্টদের আয় বাড়াতে ব্যাংকগুলোর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছি
আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ২০১৫ সালের জুন মাসে দিকে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার আওতায় এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া শুরু করে। তখন কেউ এজেন্ট হতে চাইছিল না। তারপরও আমি দুটি শাখা দিয়ে সাহস করে শুরু করি। প্রথম তিন মাস ৪০-৫০ জন আত্মীয়স্বজন নিয়ে গ্রামে গ্রামে ক্যাম্পেইন করেছি। এরপর কসবা-আখাউড়া এলাকায় আমার পরিবার আরও আটটি শাখা চালু করেছে।
সব মিলিয়ে ১০টি শাখায় এখন ৪০ হাজারের মতো ব্যাংক হিসাব আছে। এই হিসাবগুলোর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকার ওপরে আমানত সংগ্রহ হয়েছে। দিনে ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। এখন মাসে ৫ লাখ টাকার বেশি মুনাফা আসছে।
এ কাজের মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছি। বড় পাওয়া—এলাকার কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ। আমি সব সময় চেষ্টা করি ব্যাংকের যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে, তা আমার অর্ধশত কর্মীদের জন্য নিশ্চিত করতে।
বিনিয়োগের পরিমাণ কমানো দরকার
আড়াই বছরের মতো হলো আমি সিটি ব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছি। যে বাজারে আমাদের শাখা, সে বাজারটি বেশ বড়। বাজারটিতে প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ আসে। তাই এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি হিসাব খুলতে পেরেছি, যা আমাদের কাজকে বেশ সহজ করে দিয়েছে। এসব হিসাবের মাধ্যমে আমানত এসেছে চার কোটি টাকার বেশি। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বাইরে আমরা সিটি আলোর সেবাও প্রদান করছি।
আমার এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে ১৫ জনের মতো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে আমাদের বিনিয়োগের বড় একটি অংশ চলে যায় নিরাপত্তা জামানত হিসেবে। তারপর অফিস নেওয়া থেকে শুরু করে নগদ টাকা মিলিয়ে বিনিয়োগ লাগে আরও ৩০ লাখের মতো।
আরও পড়ুন…২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের করোনা শনাক্ত, সুস্থ ২১০
তাই বিনিয়োগের পরিমাণ কমানো দরকার। তাহলে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। বিনিয়োগ বাড়লে, আয় বাড়ে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে আশা করা যায়, সামনে আরও ভালো কিছু হবে।
ইবাংলা/জেএন/২৩ জানুয়ারি, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.