চলতি বছর চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসবের ছুটি ছিল চীনাদের জন্য অসাধারণ এক ছুটি। এ সময় মহামারি প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হয়। ফলে, চীনারা তিন বছর পর মনের মতো করে বসন্ত উৎসবের সাত দিনের ছুটি কাটানোর সুযোগ পায়। এর ফলে, এবারের ছুটিতে চীনে খুচরা বিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে।
চলতি বছরের বসন্ত উৎসবের ছুটিতে চীনের অভ্যন্তরীণ পর্যটনবাজারে পর্যটকের সংখ্যা ৩০ কোটি পার্সন টাইমস ছাড়িয়ে যায়। এ সময় দেশের ১০৭৩৯টি এ শ্রেণীর দর্শনীয় স্থান স্বাভাবিকভাবে চালু হয়, যা দেশের সব এ শ্রেণীর দর্শনীয় স্থানের মোট সংখ্যার ৭৩.৫ শতাংশ।
বিভিন্ন জায়গায় টিকিট মওকুফ বা ডিসকাউন্ট দেওয়া হয় এবং কুপনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়। অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বসন্ত উৎসবে বিনা টিকিটে উন্মুক্ত এ শ্রেণীর দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা ছিল ১২৮১টি, যা দেশের সব দর্শনীয় স্থানের ৯ শতাংশ।
চীনের অনেক জায়গার দর্শনীয় স্থান এবারের ছুটিতে রাতেও খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। যেমন, বেইজিংয়ের পাতালিং অংশের মহাপ্রাচীর প্রথমবারের মতো রাতের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে; সিছুয়ান প্রদেশে রাতে চিন নদীতে ভ্রমণ, লন্ঠন মেলা, লাইট শোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু থাকে।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্য গ্রেফতার
বিভিন্ন নীতি ও সুবিধাজনক ব্যবস্থার কারণে, অনেক দর্শনীয় স্থানে এবার মানুষের ভীড় দেখা যায়। চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপাত্তকেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের বসন্ত উৎসবের সরকারি ছুটিতে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা ৩০ কোটি ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩.১ শতাংশ বেশি। এতে আয় হয়েছে ৩৭৫.৮ বিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।
এবারের ছুটিতে চীনাদের বিদেশে ভ্রমণও বেড়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় অভিবাসী পরিচালনা ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বসন্ত উৎসবের ছুটির প্রথম ছয় দিনে, চীনে প্রবেশকারী ও চীন থেকে বিদেশে যাওয়া লোকের সংখ্যা ছিল ২৩.৯ লাখ, যা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ১২৩.৯ শতাংশ বেশি।
জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার জন্য, বিভিন্ন জায়গার যোগাযোগ বিভাগ রেডিও, টিভি এবং ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জনসেবা দিয়েছে।
অন্যদিকে, রেস্তোরাঁ ও সিনেমাহলগুলোতেও লোকজনের ভীড় ছিল বেশি। চীনের অনলাইন প্লাটফর্ম মেইথুয়ানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বসন্ত উৎসবের প্রথম ছয় দিনে, দেশের রেস্তোরাঁগুলোতে অতিথির সংখ্যা ২০২২ সালের চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি ছিল।
কিছু কিছু রেস্তোরাঁয় অতিথিদের খালি টেবিলের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়। চীনের রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রধান ছেন সিন হুয়া জানান, বসন্ত উৎসব রেস্তোরাঁ বাজার চাঙ্গা করেছে। ভবিষ্যতে বাজার আরো চাঙ্গা হবে।
সিনেমা বাজারও বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে ছিল যথেষ্ট চাঙ্গা। চীনের মাওইয়ান প্লাটফর্মের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৭ জানুয়ারি রাত ৯টা পর্যন্ত, ২০২৩ সালের বসন্ত উত্সবে চীনের চলচ্চিত্রের টিকিট বক্স ৬.৭ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে।
চলতি বছরের বসন্ত উৎসবে সিনেমা খাতে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা গেছে। বসন্ত উৎসবের ইতিবাচক প্রভাব গোটা বছরজুড়ে সিনেমা খাতে দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে আগ্নেয়াস্ত্র-ইয়াবাসহ গ্রেফতার ৪
এই বসন্ত উৎসবের ছুটিতে চীনের অর্থনীতির প্রাণশক্তি আরেকবার দেখা গেছে। দেশের অর্থনীতির ওপর চীনা ভোক্তাদের আস্থা বেড়েছে। বসন্ত উৎসবের এই ইতিবাচক প্রভাব গোটা বছরজুড়ে চীনা অর্থনীতির ওপর পড়বে বলে আশা করা যায়। সূত্র: শুয়েই ফেই ফেই, চায়না মিডিয়া গ্রুপ( সিএমজি)।
ইবাংলা/জেএন/২৯ জানুয়ারি, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.