সাম্প্রয়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্প্রীতি সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বুধবার দুপুর বারটার সময় জাতীয় জাদুঘরের সামনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম পেশাজীবী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এ কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে রাজধানীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন। পাশাপাশি এহেন সাম্প্রদায়িক হামলাকে রুখে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা স্বাচিপের সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা আরিফুল জোয়ার্দার টিটোর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন দেশ বরেণ্য চিকিৎসকরা।
হোসেন জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগি্যে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে শান্তি বিরাজ করছে। খাদ্যের অভাব নাই, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল। অথচ বিএনপির আমলে দুর্নীতি চ্যাম্পিয়ান হয়। বিএনপি জামায়েত যখন রাজনৈতিকভাবে কোন উন্নতি লাভ না করছে তখন ই তারা সুকৌশলে কুমিল্লা ও রংপুরে হামলা করছে। বিএনপির জন্ম হয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। ক্যান্টনমেন্টে যে দল গঠন করা হয়েছে সে দল কখনো স্বাভাবিক রাজনীতি করে। তারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না,তারা জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে না। তারা ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আমার মনে করি এ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দাত ভেঙ্গে দিতে হবে।
সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা হাবিবে মিল্লাত বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বঙ্গবন্ধুর দেশ এখানে কেউ সাম্প্রদায়িক হামলা করে পার পাবেন না। জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছেন তখন ষড়যন্ত্র কারীরা এ হামলা করেছে। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। বিচার করা হবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেন, আমাদের দেশে নাগরিক সমাজে সবচেয়ে উচু স্তরের লোক হলেন চিকিৎসক সমাজ। সেই চিকিৎসক সমাজ আজকে যে মানবন্ধন করেছে। এ মানবন্ধন হচ্ছে সম্প্রীতির বন্ধন। এ বন্ধন হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক প্রত্যয়।
যাদের হিয়ায় আজকে পাকিস্তান, যাদের চেতনায় পাকিস্তান, যাদের চেতনায় পাকিস্তান, যাদের চেতনায় জামায়েত। এই বিএনপি জামায়েত হচ্ছে বাংলাদেশের অপশক্তি। যারা তথাকথিত গণঅভ্যুত্থানের নামে সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটিয়ে, পূজা মণ্ডপে, হিন্দুদের বাড়িতে আক্রমণ করে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করতে চায়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তির বাংলাদেশ। তাদের আমরা একাত্তরে পরাজিত করেছি। আগামীতেও আমরা তাদের প্রতিহত করব। প্রয়োজনে একাত্তরের মত শহীদ হবো, তবুও বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক হতে দেবো না।
সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্প্রীতি সমাবেশ ও মানবন্ধন কর্মসূচি সভাপতি অধ্যাপক ডা আব্দুর রউফ শর্দারের সভাপতিতে স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা এমএ আজিজ বলেন,আট শতকের পড়ে এই বাংলায় বৌদ্ধ পাল রাজারা ৪০০ বছর শাসন করে। এর আগে থেকেই এ ভূখণ্ডে হিন্দু বুদ্ধ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতির ঐতিহ্য ছিল। বৌদ্ধ রাজারা হিন্দুদের পূজার জন্য মন্দির নির্মাণসহ ধর্মীয় কাজে উদার হস্তে দান করতেন।
মধ্যযুগে প্রায় ৬শ বছর বিদেশী মুসলমানরা এ দেশে শাসন করে। সুলতান ও মোঘল শাসনামলেও এই অঞ্চলে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট ছিল। এ অঞ্চলে ইংরেজদের শাসনামলে সর্ব প্রথম সাম্প্রদায়িক বীজ রোপন করে কিংবা সাম্প্রদায়িক ক্ষতের সৃষ্টি করে। এরা সুকৌশলে হিন্দু মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িকতা। ১৯৪৭ দেশ ভাগের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্ম নিরপেক্ষতা ও অসম্প্রদায়িকতা চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেন। পরর্বতীতে দেশ স্বাধীন করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময় সাড়ে তিন বছর ধর্ম নিরপক্ষেতার চর্চা করার সুযোগ পেয়েছিল। আমরা চাই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রীর হাতে সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ফিরে যেতে।
সাম্প্রতি সময়ে সংখ্যালঘুদের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, সবাই জানে হিন্দুরা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। তাই বিএনপি জামায়েত তাদের উপর পরিকল্পিত হামলা করেছে।
বিএনপি জামায়েত আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক কমাতে চায়, তাঁদের উপর হামলা নির্যাতন করে সরকারের ইমেজ নষ্ট করতে চায়।তাদের উচ্ছেদ করে পাশের দেশে পাঠাতে চায়।তাই তাঁদের উপর এ ধরণের হামলা নির্যাতন করে বিতারণের ব্যবস্থা করতে চায়। বিএনপি জামায়েত এমন হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ইমেজ নষ্ট করতে চায়। সংখ্যালুঘু নির্যাতন যেন জামায়েত বিএনপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি পুজোর আগে বারবার বলেছে তারা গণঅভ্যুত্থান করবে। তাদের গণঅভ্যুত্থানের অন্তরালে ছিলো এই সংখ্যালুঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা। এখন বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কথা বলে, গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কথা বলেন। এতে প্রমাণিত হয় বিএনপি জামায়েতকে সঙ্গে নিয়ে এ হামলা ঘটিয়েছে।
কর্মর্সচিতে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা হাবিবে মিল্লাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা মো শারফুদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো স্পাইন সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডা মোহাম্মদ হোসেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা আবু ইউসুফ ফকির, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ হৃদ রোগ ইনস্টিটিউট শাখার সদস্য সচিব ডা. পিজুষ বিশ্বাস, অধ্যাপক ডা মো জাহাঙ্গীর আলাম প্রমুখ।