লাগামহীন বাজার দর।। মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন চরম সংকটে

নিজেস্ব প্রতিনিধি

নিত্যপণ্যের দাম কোনো কিছুতেই লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। জরুরি নিত্যপণ্য চাল,ডাল,তেল,চিনি,আটা-ময়দা,পেঁয়াজ ও আলুর দাম বেড়েই চলেছে। একইসঙ্গে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠলেও সেখানেও স্বস্তি নেই।

বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) নিত্যপণ্যের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়,নদীর মাছ,গরু বা খাসির মাংসের বদলে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মাংসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে। দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম ও ব্রয়লার মুরগিও কিনতে পারছেন না অনেকে। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৪০ টাকা। ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ১২০ টাকা।

তেল, আলু, পেঁয়াজ, মরিচের দামও এখন আকাশছোঁয়া। ফলে নিত্যদিনের বাজার খরচ মেটাতে দিশাহারা নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না কিছুতেই। জীবন চালাতে ধার-কর্য করছে প্রতিনিয়ত। এতে করে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্নবিত্তদের।

এদিকে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় বাজার করতে আসা ভ্যান চালক সামসুল হক বলেন, আগের মতো আয় নেই। অথচ খরচ বেড়েছে অনেক। পরিবারের সবার মুখে ডাল-ভাত দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেলাতে পারছি না। চরম সংকটের মধ্যে দিন কাটছে বলে তিনি দুঃখ করেন।

অন্যদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক মাসে সবচেয়ে বেশি  বেড়েছে পেঁয়াজ ও ভোজ্য তেলের দাম। এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। বুধবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা কেজি। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা। এই সময়ে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ।

আর এক বছরের ব্যবধানে পণ্য দুটির দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত। ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ১৫০-১৫৫ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা। আর এক বছর আগে ছিল ৯০-৯২ টাকা।

ফলে বছরের ব্যবধানে ভোজ্য তেলের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ ছাড়া চালের দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১১ শতাংশ। মোটা চালও এখন ৫০ টাকা কেজি। খোলা ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে ২ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। প্যাকেটজাত আটার দাম এক মাসে বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা আর খোলা ময়দা ১৬ টাকা পর্যন্ত। টিসিবির হিসাবে এক ডজন ডিম প্রায় তিন মাস ধরেই ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৯০-৯৫ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগির বাজারে তো রীতিমতো আগুন লেগেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম।

প্রতি কেজি আলু বুধবার বিক্রি হয়েছে ২৫-২৭ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৮-২০ টাকা। প্রতি কেজি লাল চিনির দাম ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই মাস আগে এ চিনির দাম ছিল ৬৫-৭০ টাকা। আমদানি করা মোটা দানার ডালের প্রতি কেজির দাম ৯০ টাকা, যা তিন মাস আগে ছিল ৭০ টাকা। এক বছর আগেও এ ডালের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে টানা লকডাউনে কাজ হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ। বেশির ভাগ কর্মজীবীর আয় কমেছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রায় সব মানুষেরই নাভিশ্বাস উঠেছে জীবন চালাতে। সংসার চালাতে না পেরে অনেকেই ঢাকা ছেড়েছেন। তাই নিত্যপণ্যের লাগাম টেনে না ধরতে পারলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবন চরম সংকটে পড়বে বলে মনে করেন তারা।

টি/আর

Contact Us