রাজধানীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাসের টিকাদান কাল ১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ১৬ শিক্ষা থানার ১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৯২টি বুথে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তী সময় ঢাকার বাইরের আরও ২১টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্র বেছে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিকাদানের সময় কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে যাতে চিকিৎসা দেওয়া যায় সে জন্য কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চিকিৎসক থাকবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। ক্রমান্বয়ে তাদের সবাইকে টিকার আওতায় আনা হবে। কাল রাজধানীর যে ১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া টিকা দেওয়া হবে সেগুলো হলো- হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চিটাগং গ্রামার স্কুল, কসমো পলিটন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীরশেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ ব্রিজ স্কুল, স্কলাসটিকা স্কুল, বি এইচ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোতোয়ালি, বংশাল ও চকবাজার এই তিন পুলিশ থানা নিয়ে গঠিত হয়েছে শিক্ষা থানা কোতোয়ালি। উত্তরা পূর্ব ও উত্তরখান নিয়ে উত্তরা শিক্ষা থানা। দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর ও ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট শিক্ষা থানা। কাফরুল থানা গঠিত কাফরুল ও ভাষানটেক নিয়ে। ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট নিয়ে ধানমন্ডি থানা। মোহাম্মদপুর ও আদাবর নিয়ে মোহাম্মদপুর থানা। শেরেবাংলা নগর, মিরপুর নিয়ে মিরপুর থানা। রূপনগর ও পল্লবী নিয়ে রূপনগর থানা এবং শাহআলী ও দারুস সালাম নিয়ে শাহআলী শিক্ষা থানা গঠিত। মতিঝিল, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, রমনা, পল্টন, ওয়ারী ও শাহবাগ পুলিশ থানার সমন্বয়ে মতিঝিল শিক্ষা থানা। লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর নিয়ে লালবাগ শিক্ষা থানা। কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, বংশাল ও চকবাজার নিয়ে কোতোয়ালি থানা। শ্যামপুর, গেন্ডারিয়া ও কদমতলী নিয়ে শ্যামপুর থানা। গুলশান, তেজগাঁও শিল্প এলাকা এবং বনানী পুলিশ থানা নিয়ে গুলশান শিক্ষা থানা গঠিত। বাড্ডা, ভাটারা ও রামপুরা নিয়ে বাড্ডা থানা এবং ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ ও মুগদা পুলিশ থানা নিয়ে গঠিত ডেমরা শিক্ষা থানা। সে অনুযায়ী বাড্ডা ও ডেমরা শিক্ষা থানার শিক্ষার্থীরা টিকা নেবে বসুন্ধরা এলাকার হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও রামপুরার সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে।
গুলশান থানার শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্র গুলশান ১ নম্বরে অবস্থিত চিটাগং গ্রামার স্কুল। কোতোয়ালি ও শ্যামপুর থানার শিক্ষার্থীদের যেতে হবে সূত্রাপুরের কসমো পলিটন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে। লালবাগ ও ধানমন্ডি থানার শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে পিলখানায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজে।
মতিঝিল থানার শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মতিঝিল ক্যাম্পাসে। শাহআলী, পল্লবী ও মিরপুর থানার শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে ঢাকা কমার্স কলেজে। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর থানার শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে অবস্থিত কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে। উত্তরা থানার শিক্ষার্থীদের যেতে হবে ওই এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত সাউথ ব্রিজ স্কুলে। কাফরুল ও ক্যান্টনমেন্ট থানার শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য যেতে হবে মিরপুর ১৩ নম্বরে অবস্থিত স্কলাসটিকা স্কুলে। উত্তরা ও ক্যান্টনমেন্ট থানার শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে উত্তরখান এলাকার বি এইচ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এ ছাড়া কোতোয়ালি থানার শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য যেতে হবে নয়াবাজারে অবস্থিত আহমেদ বাওয়ানী একাডেমিতে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১২-১৭ বছর বয়সীদের ফাইজারের যে টিকা দেওয়া হবে তা সংরক্ষণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকতে হয়। এ জন্য সব জেলাতেই ক্রমান্বয়ে প্রয়োজনমতো শীতাতপ ব্যবস্থা ঠিক করে দেশব্যাপী কিশোর-কিশোরীদের টিকাদান শুরু করা হবে। বর্তমানে দেশে ৭০ লাখ ফাইজারের টিকা মজুদ রয়েছে, যা ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে। আগামী নভেম্ব^রে এই টিকার আরও ৩৫ লাখ ডোজ দেশে আসবে।
এই টিকাদান প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ১ নভেম্বর থেকে ঢাকার ১২টি কেন্দ্রে এবং ঢাকার বাইরের ২১টি কেন্দ্রে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার জন্য কেন্দ্র বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী যেসব স্থানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ সুবিধা নেই সেখানে দ্রুততার সঙ্গে শীতাতপ সুবিধা তৈরি করে ঢাকায় টিকাকেন্দ্র বাড়ানোসহ সব জেলায় ক্রমান্বয়ে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে বর্তমানে টিকার কোনো সংকট নেই। গত ২৭ অক্টোবর রাতে চীনের সিনোফার্মের আরও ৫৫ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এ নিয়ে এখন আমাদের হাতে প্রায় ২ কোটি ডোজ টিকা মজুদ রয়েছে। আগামীতেও এভাবে টিকা আসতেই থাকবে। ডিসেম্ব^রের মধ্যেই টিকাদানের ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ পূরণ সম্ভব হবে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের জন্যও টিকাদান চলমান থাকবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অভিভাবকমহলে বেশ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, তারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারছেন না। আবার এসব শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ এসএসসি পরীক্ষার্থী। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। তাই এমন সময়ে টিকা নিয়ে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে তা হলে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকাদান সম্পর্কিত সব তথ্য সুস্পষ্টভাবে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তারা। রাজধানীর মনিপুর স্কুলের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর বাবা মো. সেলিম বলেন, এসএসসি পরীক্ষার আগে টিকা দিলে সন্তান যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তা হলে পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী। বনানী বিদ্যা নিকেতেনের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, একাধিকবার চেষ্টা করেও তিনি সন্তানের নিবন্ধন করতে পারেননি।
শিক্ষার্থীদের টিকাদান বিষয়ে প্রস্তুতি জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রাজধানীর ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের এমএনসিএন্ডএইচ শাখা থেকে নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। অনেক সময় দেখা যায়, একটি কেন্দ্রে কোনো একজন শিশু অসুস্থ বোধ করলে অন্য শিশুদের মধ্যে গণহিস্টিরিয়া দেখা দেয়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব টিকাদান কেন্দ্রে চিকিৎসক রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
একই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষার্থীদের তালিকা আইসিটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারা সেই তালিকা সার্ভারে এন্ট্রি করবে। এসব শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন জমা দিতে হবে। তবে যাদের জন্ম নিবন্ধন নম্বর ১৭ ডিজিটের তাদের তথ্য এন্ট্রি হয়ে যাচ্ছে। যাদের জন্ম নিবন্ধনের নম্বর ১৬ ডিজিটের তাদের এন্ট্রিতে সামান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে সব ঠিক হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুধু নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, টিকা দিলে কারও কারও সামান্য জ্বর আসতে পারে। সেটি সর্বোচ্চ একদিন স্থায়ী হয়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।