রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব)-৫
নানা অপকর্মের হোতা ও অবৈধ সম্পদ অর্জনে হামলা মামলার নেপথ্যের গডফাদার রাজউকের উপপরিচালক পিস্তল সোহাগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : সোহাগ মিয়া ওরফে পিস্তল সোহাগ রাজউক এবং ডেভেলপার/ ইমারত নির্মানকারী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে যেন এক অজানা আতংক। সোহাগের অবৈধ কর্মকান্ড আর ক্ষমতার দাম্ভিকতায় রাজউকের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অসহায়।
তার ভয়ে সহজে কেউ মুখ খুলে না। ১৪ বছরের কর্মজীবনের ৭ বছরই ছিল ওএসডি। তার অবৈধ কাজের হাত অনেক লম্বা। ছোটকাল থেকে সোহাগ দুষ্ট প্রকৃতির।বাগেরহাটের মোল্লা হাট থেকে তার বেড়ে উঠা। তার অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। গুম খুন আর চাঁদাবাজির কারণে এক সময়ে এলাকা ছাড়া হয়।
আরও পড়ুন>>রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব)-৪
স্থানীয় এমপি শেখ হেলালের আত্মীয় পরিচয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ উপপরিচালক হিসেবে চাকুরি পেয়ে যান। উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকার সুবাদে ছলচাতুরী আর জোর জবরদস্তি করে অবৈধভাবে সম্পদ গড়ার প্রতিযোগিতায় মরিয়া হয়ে ওঠে।
এসব বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ হেলাল জানতে পেরে সোহাগের এসব অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বারন করলে শেখ হেলালের কাছে ভিড়তে না পেরে। বর্তমানে শেখ সেলিমের আশ্রয় থাকার জোর তৎপর রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল সোহাগ ওরফে পিস্তল সোহাগের আপন ভাগিনা কিশোর গ্যাং প্রধান খ্যাত বাঁধনের প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়। এ হত্যার ঘটনায় দাউদকান্দি থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে (৬৪) মো: শফি ভুইয়া, (৬৫) মো: জিল্লুর করিম ভূইয়া, (৬৬) মো: মাহমুদুল হক প্র: বুলু, (৬৭) শাহ মাহমুদুল হক, (৬৮) আ: সাত্তার মানিক, (৬৯) শাহরিয়ারদের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাট নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় এই হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে পিস্তল সোহাগের ইন্দনে।
আরও পড়ুন>>নিহত বাঁধন দাউদকান্দি কিশোর গ্যাং প্রধান ছিলো
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, উপরোল্লিখত ব্যক্তিরা ডেভলপার ব্যবসায়ী থাকা সুবাদে প্লট মালিকের মাধ্যমে রাজউকের কর্মকর্তা হিসেবে পিস্তল সোহাগের সম্পর্ক হয় এবং একটি ভবন নির্মাণে রাজউক থেকে নকশা পাশের দায়িত্বে থাকেন উপপরিচালক সোহাগ।
সেই সুবাদে প্লট মালিকের কাছ থেকে নেওয়া ফ্ল্যাটটি ডেভেলোপারদের কাছ থেকে বুঝে নেয়ার পরও দাউদকান্দিতে বাধন হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় আসামী করেন শাহরিয়ারকে। ৬৯ নম্বর আসমিরা শাহরিয়াররা ফ্ল্যাট ক্রয় করেন ডেভলপারদের কাছ থেকে।
ওই ফ্ল্যাটটিও সোহাগ ক্ষমতার জোরে দখল করে নেয়। এর প্রতিবাদে শাহরিয়ারের মা পুলিশ ও ডেভেলপার মালিকদের সহায়তায় নিজের ফ্ল্যাট দখলমুক্ত করেন। এরই জেরে শাহরিয়ারসহ ডেভেলাপার মালিকদের মিথ্যা ও হয়রানিমূলভাবে কিশোর গ্যাং নেতা বাঁধন হত্যা মামলায় আসামি করা হয়।
রাজউকের বিতর্কিত উপ পরিচালক সোহাগ ওরফে পিস্তল সোহাগ মূল ঘটনাকে আড়াল করে উক্ত ব্যক্তিদের ওপরে কিশোর গ্যাং প্রধান ভাগিনা প্রতিপক্ষের হামলায় নিহতের ঘটনায় এদরকে জড়িত করাই তার মূল কাজ। যারপরণায় এই ব্যক্তিদের নাম এই মামলার এজাহারে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। অথচ এ ঘটনার সাথে এদের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন>>রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব) ৩
রাজউক কর্মকর্তা সোহাগ মিয়া ওরফে পিস্তল সোহাগের পারিবারিক অবস্থান সম্পর্কে এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাদের এমন কোন সম্পদ বা পরিচিতি ছিলো না যাতে তার বাবার নামে হ্যারিয়ার গাড়ি আর সোহাগ পিস্তলের লাইসেন্স পেতে পারে। কিন্তু কোন আলাদিনের চেরাগ বা অদৃশ্য কোন অশুভ শক্তির জোরে সোহাগের চলাচল ভিভিআইপি স্টাইলে হয়ে গেলো?
সূত্র জানায়, সোহাগ বেশ কয়েকটা দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে চলাচল করেন। তার মধ্যে একটা হ্যারিয়ার গারি আর এই গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন দেখা যায় সোহাগের বাবা দাউদ মিয়ার নামে।
এলাকাবাসী প্রতিবেদককে বলেন, সোহাগের বাবা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অনুগত সৈনিক ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর তার বাবা দেশে ফিরে আসেন। এই সময় পরিবারে ছিলো না তেমন কোন স্বচ্ছলতা বা উল্লেখযোগ্য কোন সম্পদ। রাতারাতি কিভাবে হ্যারিয়ার গাড়ির মালিক হলেন দাউদ মিয়া? জনমনে প্রশ্ন। গ্রামের অনেকে সোহাগের বাবাকে রাজাকার হিসেবেই জানেন বলেও জানা গেছে।
আরও পড়ুন>>রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব)২
সোহাগ ওরফে পিস্তল সোহাগের নামে আগ্নেয় অস্ত্রের লাইসেন্স? একজন উপপরিচালক তার নামে কোন বিধিতে আগ্নেয় অস্ত্রের লাইসেন্স? কথিত আছে সোহাগের অবৈধ কর্মকান্ডের নির্ভরযোগ্য সহযোগি তার সঙ্গে থাকা আগ্নেয় অস্ত্র (পিস্তল)।
সূত্রমতে জানা গেছে, রাজউকের সাবেক এক চেয়ারম্যান থেকে ক্লায়েন্ট কিংবা কোম্পানীর মালিকসহ অনেকেই বাদ পরেননি পিস্তলের ভয় থেকে। পান থেকে চুন খসলেই তাক্ করেন সঙ্গে থাকা পিস্তল। তখন ভয় আর আতংকে কেউ কিছু বলেন না সোহাগের অপকর্মের বিরুদ্ধে।
সোহাগের পরিবারের অন্য সদস্যরাও কোনো না কোন অপরাধে জড়িত। এলাকাবাসী জানায় সোহাগের দুই ভাই ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তার এক ভাই এলাকা এবং এলাকার বাইরের মানুষের কাছে দীন ডাকাত নামেই পরিচিত। রয়েছে একাধিক মামলা
সোহাগ ওরফে পিস্তল সোহাগ ছাত্র জীবন থেকেই বখাটে বনে যাওয়া একটি দুষ্ট প্রকৃতির ছেলে ছিলেন বলে অনেকে জানান। বখাটেপনার এক পর্যায় বিভিন্ন মামলার আসামী হওয়ার কারণে পিস্তল সোহাগকে এলাকা ছাড়তে হয়। অপরাধী জগতের সঠিক তথ্য গোপন করে রাজউকে চাকরি নেয়।
আরও পড়ুন>>রাজউকের আতঙ্ক পিস্তল সোহাগ! (পর্ব)১
রাজউক কর্মকর্তাদের প্রমোশন এর বিষয়ে নিজ এলাকা থেকে ডিজিএফআই এর মাধ্যমে তদন্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। সে হত্যা মামলার আসামী তা গোপন করে চাকরিতে প্রবেশ করে বলে অভিযোগ উঠে আসে। পরে ডিজিএফআইয়ের রিপোর্টে এর সত্যতা বের হয়ে আসে। পিস্তল সোহাগ টের পেয়ে ছলচাতুরি করে তা ধামাচাপা দিয়ে রাখারও অভিযোগ আছে।
এলাকার সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায়, পুরো পরিবারের উপর এলাকাবাসী নাখোশ। কাগজে কলমে সোহাগ ওরফে পিস্তল সোহাগের দুটি স্ত্রী থাকলেও তার অলিখিত অনেকগুলো স্ত্রীর খবর পাওয়া যায়। এছাড়াও খুলনা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় নারী নিয়ে ফুর্তি মাস্তি সোহাগের রুটিন কাজ বলে অনেকেই জানান। এলাকার একাধি ব্যক্তি জানায় কিছুদিন আগে খুলনাতে একটা আবাসিক হোটেলে নারী নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলেও টাকার বিনিময় পার পেয়ে যান।
বনানীতে আমেনা হোল্ডিংস নামে একটি অফিস খুলে সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে সে ফুর্তি করে। অভিনয় শিল্পী ও মডেল থেকে শুরু করে ফুটপাথ থেকে মেয়ে নিয়ে আমোদ-ফুর্তিতে অফিসকে এক রঙমহল বানিয়ে তুলছে।
কামুক এবং নারী লোভী সোহাগ বসুন্ধরা আই ব্লকের দেশের এক ব্যবসায়ী এবং লন্ডন প্রবাসীর সুন্দরী স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে।একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর স্বামী লন্ডন প্রবাসী থাকার সুবাদে তাকে ফাঁদে ফেলে পরকীয় করতে বাধ্য করেন সোহাগ।
আরও পড়ুন>>ভারতকে হুংকার অস্ট্রেলিয়া কোচের
ওই নারীর স্বামীকে সোহাগের বনানীর আমেনা হোল্ডিংসের অফিসে ডেকে নিয়ে মারপিট করে ব্ল্যাংক স্টাম্পে সই স্বাক্ষর রেখে তাকে লন্ডন পালিয়ে যেতে বাধ্য করান। ওই লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রীকে ভিক্টিম হিসেবে ব্যবহার করেন তার অনৈতিক কর্মকান্ডের অনেক ক্ষেত্রে। তার এ অনৈতিক কাজের একমাত্র কারণ হলো অবৈধ বিপুল অর্থ বৃত্তের মালিক বনে যাওয়। এইভাবে নামে বেনামে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে সোহাগ।
বাবা, ভাই, বোন, শশুর, শাশুড়ী ও শালা, শালীদের নামে ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিকানা দেখালেও সোহাগ রাজউকের কর্মকর্তা হিসেবে প্লট মালিক কিংবা কোন ডেভেলপার কোম্পানীকে নকশা পাশ করে দেওয়ার কথা বলে চালাকির বশত একটি ফ্ল্যাট হাতিয়ে নিয়ে স্বজনদের নামে রেজিস্ট্রি করে রাখেন পূর্বেই। যার প্রকৃত মালিক সোহাগ নিজেই।
একজন সরকারি কর্মকর্তা অথচ অফিসে পিস্তল প্রদর্শন করেন এবং অযথা ভয়ভীতির আবহাওয়া সৃষ্টি করে। এতে অবৈধ কাজগুলো বাগিয়ে নিতে সুবিধা হয়। কেউ আর সহজে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে সাহস পায়না।
রাজউকের নকশা অনুমোদনের নামে ডেভেলপারদের নানাভাবে হয়রানি করে। লোকজনের জমাকৃত কাগজপত্র রেখে তার নিজস্ব লোক দিয়ে মামলা করে এবং অযথা হয়রানি করে। নকশা অনুমোদনের অজুহাত দেখিয়ে আত্মীয় স্বজন মা-বাবা, শশুর-শাশুড়ীর নামে ডেভেলপারদের কাছ থেকে ফ্লাট আদায় করে নেন।
প্ল্যান অনুমোদনের অজুহাত দেখিয়ে উত্তরা ৪ নং সেক্টরের ১৩ নং রোডের ৩২ নং প্লটের ৬ষ্ঠ তলায় ২৫৯০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্লাট তার বাবা দাউদ মিয়ার নামে প্লট মালিক কামাল উদ্দিন আহমেদ থেকে সাবকবলা করে নেন।
আরও পড়ুন>>কিছু কুলাঙ্গার বাংলাদেশের বদনাম করে বেড়ায়: প্রধানমন্ত্রী
তার বাবার নামে রয়েছে কোটি টাকার হ্যারিয়ার গাড়ি যা শুনলে আলাদিনের প্রদীপের মতো মনে হয়। অথচ যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের অনুগত একজন সাধারণ সিপাহী ছিলেন। তার অবৈধ কাজের সীমা-পরিসীমা নেই। রাজউকের সীল সই জাল করে অবৈধভাবে নকশা অনুমোদন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে অনেককে পথের ফকির বানিয়েছে।
এছাড়াও আমেনা হোল্ডিংয়ের চেয়ারম্যান কাগজে কলমে আমেন খাতুন লুনা থাকলেও সর্ব ক্ষেত্রে সই স্বাক্ষর করেন রাজউক কর্মকর্তা সোহাগ। নানাজনের সই জাল করে আপন লোকদের দিয়ে ডেভেলপার কোম্পানি খুলেছে। এমনকি মিচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংকে আমেনা খাতুন লুনা ও বডিগার্ড সাহিদের নামে সই জাল করে হিসাব খোলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে এ দুজনের নামে City Bank এ হিসাব খুলে নিজের সই দিয়ে City Bank এ লেনদেন পরিচালনা করছেন বলে বিশেষ সূত্রে জানা যায়।
ইবাংলা/ বা এ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.