দেশে দ্বিতীয় দফার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে। গতবারের মতো এবারও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে দলগুলো। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের মনোনীত প্রার্থীদের নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে নামিয়েছে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে প্রায় ৯০০ বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে আছেন। যা আগে কখনও দেখা যায়নি। এই দলীয় প্রতীকেই ‘বিব্রত’ ক্ষমতাসীন দলটি। যদিও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন প্রক্রিয়াটি ক্ষমতাসীন দলের সুপারিশেই বাস্তবায়ন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৃণমূলের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলপর্যায়ের নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতারা বিব্রত হচ্ছেন তৃণমূল নেতাদের দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গের কারণে। অন্যদিকে, তৃণমূল পরিচালনায় যোগ্য ও ত্যাগী কর্মীদের মনোনয়ন দিতে না পারায় বিব্রত স্থানীয় নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সভাপতিমণ্ডলী ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য বলেন, একটা ইউনিয়নে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকেন। সেখান থেকে একজনকে মনোনীত করা হয়। মনোনয়নবঞ্চিতরা দলের আদর্শ মানলেও কোনো কোনো জায়গায় এ সিদ্ধান্ত অমান্য করা হয়। সেক্ষেত্রে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হলেও এটা কিন্তু কোনো সমাধান নয়।
শেরপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৪ প্রার্থীসহ ৫৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ছয় ইউপিতে সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ মো. আতিউর রহমানের বড় ভাই মো. ইসমাইল হোসেন মোটরসাইকেল প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তিনি কামারিয়া ইউনিয়ন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। শুধু ইসমাইল হোসেন নন, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই এরকম বিদ্রোহী প্রার্থী দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। এখানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯০০। এসব প্রার্থীর পেছনে দলের মন্ত্রী ও এমপিরা মদদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। অনেক জায়গায় প্রভাবশালীদের আত্মীয়-স্বজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। বিষয়টি দলের হাইকমান্ড দেখছে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে আমাদের আগেই সিদ্ধান্ত দেওয়া আছে। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, আগামীতে কখনও তারা নৌকা প্রতীক পাবেন না।
করোনায় স্থগিত থাকা প্রথম ধাপের ১৬০টি ইউপিতে ভোট হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর। ওই নির্বাচনে সহিংসতায় কক্সবাজারে দুজন নিহত হন। ১১৯টি ইউপিতে জয়ী হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। বাকিগুলোতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।
- নওগাঁর ২০টি ইউপির বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৪২ বিদ্রোহী প্রার্থী পাওয়া গেছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের ১৭ ইউপিতে ৩৫ জন, পাবনার ১০ ইউপিতে ৩৩ জন, নেত্রকোনার ২৬ ইউপিতে ৩৬ জন, নরসিংদীর ১২ ইউপিতে ৩২ জন এবং সুনামগঞ্জের ১৯টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ৩৩ বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রায় সবাই বলছেন, তারা নিজ নিজ ইউনিয়নে জনপ্রিয়। নেতাকর্মীদের চাপে তারা প্রার্থী হয়েছেন। অনেক জায়গায় দলীয় প্রার্থীদের বিদ্রোহীদের নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই।
স্বস্তির বিষয় হলো চার জেলায় আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। এর মধ্যে রাজবাড়ীর দুটি, হবিগঞ্জের পাঁচটি, খাগড়াছড়ির ১০টি ও রাঙ্গামাটির ১১টি ইউপির একটিতেও আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।
ইবাংলা/জেডআরসি/০৬ নভেম্বর, ২০২১