বেশিরভাগ মা অভিযোগ করেন তাদের শিশু খেতেই চায় না। খাওয়ার সময় হলেই নানান ধরনের বায়না করে। খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকে। গিলতেই চায় না। এমনকি খাবার মুখে নিয়েও ফেলে দেয়। জোর করে খাওয়াতে চাইলে চিৎকার চেচামেচি করে।
শিশুকে খাওয়ানোর সময়ে অভিভাবকদের কালঘাম ছুটে যায়। খাবার থালা নিয়েই সন্তানের পেছনে সারা বাড়ি দৌড়াতে হলে তো স্ট্রেস বাড়বেই। এদিকে আবার অনেক বাচ্চাই নিজে থেকে খেতে চায় না। ফলে জোর করে মুখে খাবার ঢুকিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনও গতি থাকে না। এদিকে কান্নাকাটি-চিৎকার সব মিলিয়ে বাড়ি যেন রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে, আর শিশুর মনেও খাওয়ার অভ্যাস নিয়ে এক আতঙ্ক তৈরি হয়।
আরও পড়ুন>> শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
আপনার বাচ্চারও কি একই হাল, আর সেই কারণে কি আপনার রাতের ঘুম উড়েছে? জানুন সমাধান।
ছকে ফেলুন স্বাস্থ্যকর ডায়েট প্ল্যান
আপনার ছেলে বা মেয়ের জন্যে একটি নির্দিষ্ট খাদ্য রুটিন তৈরি করুন। সেই নিয়মেই ওকে প্রতিদিন খাওয়ান। আপনার সন্তানের ডায়েট কোনও জাঙ্কফুড রাখবেন না।
ইনস্ট্যান্ট নুডলস আর বাইরের খাবার শিশুর খাদ্যতালিকায় না রাখাই শ্রেয়। পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দিয়েই খুদের পেট ভরান। মনে রাখবেন, তার খাওয়ার রুটিনটি যেন বোরিং না হয়। পরিবারের অন্যান্য সদস্য যা খাচ্ছেন, খুদেকেও সেই খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
নতুন নতুন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করান
একটু একটু করে সন্তানকে নিত্য় নতুন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। তাকে প্রতিদিন এক খাবার খাওয়াবেন না। মনে রাখবেন, আপনার ২ বছরের শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস আপনাকেই তৈরি করতে হবে। ছোট থেকেই তাকে শেখাতে হবে খাওয়ার ধরন।
কীভাবে খাবার চিবাতে হয় এবং কতটা খাবার খেতে হয়, সেসবই তাকে শেখানোর দায়িত্ব আপনার। তার জন্যে একাধিক স্বাস্থ্যকর খাবারের অপশন রাখুন। সে যে খাবারটি বেছে নিতে চায়, তাকে সেই খাবার খেতে দিন। তাহলে তার মনেও খাবার নিয়ে আগ্রহ জন্মাবে।
খাবার সময়ে ভুলেও মোবালই বা টিভি নয়
অনেক বাবা-মাই বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময়ে তার হাতে মোবাইল দেন বা টিভি খুলে দেন। আপনি কিন্তু ভুলেও এই ‘ভুল’ করবেন না।এতে শিশুর মনসংযোগ নষ্ট হয়। খাওয়া সম্পর্কে কোনো ধারণাই তার তৈরি হয় না। এভাবে শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করাবেন না। টিভি দেখানোর পরিবর্তে আপনি খাওয়ানোর সময়ে তাকে মজাদার গল্প বলতে পারেন।
ভাত খাওয়ানোর সময়ে ছোট ছোট দলা করতে পারেন। প্রতিটির একটি করে নাম দিতে পারেন। সেই নামের একটি ছোট্ট গল্প বানিয়ে বাচ্চাকে ওই ভাতটুকু খাওয়াতে পারেন। এই টিপস মানলেই খেলা ঘুরে যাবে।
খাওয়ায় যেন ভীতি না থাকে
শিশুকে খাওয়ানোর সময়ে ভুলেও জোর করবেন না। তাকে বকাবকি কিংবা মারধর করাও উচিত নয়। কারণ এমন ভুল কাজ করলে তার মনে খাবার নিয়ে ভয় তৈরি হবে। এমনকী সে পরের দিন না খাওয়ার জন্যে জেদ বা বায়না করতে পারে। আপনি তাকে ভুলিয়ে ভুলিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন এবং শিশুকে ‘ফুড ট্রেনিং’ও দিন অর্থাৎ তাকে নিজে নিজে খেতে দিন। শিশুরা একা একা খেতে ভালোবাসে।
তার থালায় নানারকম খাবার সাজিয়ে দিতে পারেন। যেমন ধরুন, সামান্য ভাত দিন প্লেটের একটি দিকে, এর সঙ্গে গাজর সেদ্ধ করে মজাদার শেপ বানিয়ে দিলেন। ডিমের সাদা অংশটি এবং সামান্য পরিমাণে ডাল দিন। তাকে নিজে নিজেই এই খাবারটা খেতে দিন। তার খাবারে লবণ এবং মাখন দিয়ে মুখোরচক বানিয়ে দিতে ভুলবেন না যেন!
চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন
আপনার সন্তানের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নিন। মনে রাখবেন, ২ বছরের শিশুকে প্রচুর পরিমাণে খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। তাই জোর করে খাবার খাওয়ানোর অভ্য়াস ছেড়ে দিন। বরং অল্প অল্প রকমারি স্বাস্থ্যকর খাবারেই তার পেট ভরানোর চেষ্টা করুন। কোনও সমস্যায় পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক বা শিশুর পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে ভুলবেন না।
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.