গোপালগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক মহিলাকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। মারাত্মক আহত অবস্থায় বর্তমানে ওই মহিলা গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার খাগাইল উত্তর পাড়া গ্রামে।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা নাম্বার ৪৪, তারিখ: ২৫/০৯/২৩ইং।
আরও পড়ুন…বিরাট-আনুশকার সংসারে ফের নতুন অতিথি
মামলার সূত্রে জানা যায়, বাদী লিয়াকত মৃধার ছেলে রশিদ মৃধার পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা জমি, মামলা সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী মৃত সিরাজ খানের ছেলে শিপন খান, মিলন খান, রিপন খান ও শিপন খানের স্ত্রী সোনিয়া বেগমের সাথে শত্রুতা চলে আসছে।
তারই জের ধরেই গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আসামি শিপন খান, মিলন খান, রিপন খান, সনিয়া বেগম বাদীর মা হাজেরা খাতুন এর বসত বাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এক পর্যায়ে আসামিগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সাথে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি ভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে।
তার শোর চিৎকারে আশপাশের মহিলারা ছুটে আসলে আসামিরা হুমকি দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। এ সময় আসামিদের বাধা দিতে আসলে হাজেরা বেগম ও তার ছেলের বউয়ের গলার স্বর্ণের চেইন ও ঘরে থাকা চার লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয় আসামিরা।
আরও পড়ুন…ফের সিসিইউতে খালেদা জিয়া
পরবর্তীতে মারাত্মক আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে থাকা হাজেরা বেগমকে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকে করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খাগাইল উত্তরপাড়ার লিয়াকত মৃধা ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগম এর সাথে প্রতিবেশী সিরাজ খান এর ছেলে মিলন খান, শিপন খান।
রিপন খান, মিলন খানের ছেলে মেহেদী খান, সিরাজ খানের স্ত্রী পারুল বেগম এর সাথে জায়গা জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে আগেও কয়েকবার মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
বারবার লিয়াকত মৃধার পরিবার আহত হবার কারণে তারা প্রতিপক্ষের নাম উল্লেখ করে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০২৩।
মামলার পর থেকেই আসামিগণ মামলা তুলে নিতে পরিবারের সদস্যদের হুমকি প্রদান করে আসছিল। কিন্তু মামলার বাদি হাজেরা বেগম মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করে।
ঘটনার সময় বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ না থাকায় আসামিগণ বাদীর বাড়িতে লুট করে ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আশপাশের মহিলারা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
আরও পড়ুন…খালেদাকে বিদেশ যেতে হলে আইনি প্রক্রিয়া মোকাবিলা করতে হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এরপরে ওই দিনই মারাত্মক আহত হাজেরা বেগমের ছেলে রশিদ মৃধা বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির পাশে একটি জমির আইল নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে বিরোধ চলে আসছিল উক্ত পরিবারের।
এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে মাস ছয়েক আগে আসামিগণ অন্যায় ভাবে জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা বাধা প্রদান করে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সিরাজ খান ও তার তিন ছেলে সহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন আসামি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হাজেরা বেগমের প্রতিবন্ধী ছেলে রশিদ মৃধার মাথায় রামদা দিয়ে আঘাত করে এতে সে ঘটনায়স্থলেই জ্ঞান হারায়।
এ সময় মারামারি ঠেকাতে আসলে হাবিবুর শেখ, লিয়াকত মৃধা, রুবেল মৃধাকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে মারাত্মক যখম করে। তাদের শোর চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে আসলে আসামিরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
পরে তাদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবং বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পূর্বের ওই মামলা তুলে নিতে বার বার আসামিরা বাদীপক্ষকে হুমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু তারা মামলা তুলতে রাজি না হওয়ায় মৃত্যুর উদ্দেশ্যে হাজেরা বেগমকে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে আহত করে।
আরও পড়ুন…মুঘল কাবাব হাউজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষ
এ ব্যাপারে খাগাইল ইউনিয়ন এর ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ: বাহারুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আসামিরা প্রভাবশালী তারা টাকার গরমে কাউকে পাত্তা দেয় না।
আমরা বেশ কয়েকবার আগের ঘটনাটি মীমাংসার জন্য বলেছিলাম কিন্তু তারা মীমাংসার জন্য বসতে রাজি হয়নি। তারা বলেছিল প্রয়োজন বোধে কোটি টাকা খরচ করে ওদের উচিত শিক্ষা দেব।
বিষয়টি আমি তখন চেয়ারম্যান কে জানিয়েছিলাম। যেহেতু তারা গ্রামের সালিশ বিচার মানতে চায় না সেহেতু আমাদের করণীয় কিছু ছিল না। তবে আমরা এই ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করছি।
আরও পড়ুন…চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আওয়ামী লীগ নেতার
এ ব্যাপারে আসামি শিপন খান এর বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবারের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা পারে কথা বলতে রাজি হননি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, ঘটনার দিন গোপালগঞ্জ সদর থানা একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
এবং এই ঘটনার সাথে জড়িত সিরাজ খানের ২ ছেলে শিপন খান ও মিলন খান কে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.